'' বাংলা সাহিত্যের আসর ''

যে সমস্ত লেখক ও লেখিকা ' বাংলা সাহিত্যের আসরে ' তাদের নির্বাচিত লেখা প্রকাশ করতে চান,তারা তাদের লিখিত বিষয় টি Microsoft Words - এ লিখে অথবা Photo Shop -এ চিত্রসহ বিষয়টি প্রস্তুত করে samarkumarsarkar@yahoo.co.in বা samarkumarsarkar@gmail.com -এ E-mail করে পাঠিয়ে দেবেন । সদস্য হবার জন্য ও মন্তব্য লেখার জন্য Google Friend Connect ব্যবহার করুন। ব্লগ টিকে আপনাদের Face Book-এ Share করুন।

Tuesday, October 30, 2012

কি আর লিখি ? - সমর কুমার সরকার / শিলিগুড়ি



কি আর লিখি ?

তোমরা আমায় বলো এবার,কি আর লিখি?
না কি আবার নতুন করে লিখতে শিখি?
যা লিখেছি,যা পড়েছি,ভুলে গিয়ে,
নতুন ক'রে ভাবতে শিখি শিশু হয়ে।
চাঁদের গায়ে খুঁজে বেড়াই চরকা-বুড়ী,
কল্পনাতে উড়াই মনের রঙীন ঘুড়ি।
লাল পরী আর নীল পরী রা আসুক উড়ে,
জোনাক জলা আঁধার রাতের তেপান্তরে।
জোছনা মেখে করুক খেলা আপন মনে,
রক্তচোষা ডাইনী জাগুক বাঁশের বনে।
বনের ধারে বিশাল বটের হাজার ঝুরি,
ব্যাঙ্গমা আর ব্যাঙ্গমী রা আসুক ফিরি।
গা ছম্ ছম্,ভূত-পেত্নী,দত্যি-দানো,
রাক্ষসীদের হাঁউ-মাউ-খাঁউ হাড় কাঁপানো। 
অচিন দেশের রাজকুমার ও রাজকুমারী,
জীয়ন কাঠি,মরণ কাঠির যাদুর ছড়ি।
শিশু কালে ফেরা মানে-ই ভাল লাগা,
নতুন কিছু শেখার ঘোরে রাত্রি জাগা।
বড় হয়ে পড়ছি যা তায় নাই কোন প্রাণ,
গাইতে হবে,গাওয়া যে তাই বেসুরো গান।
মন ভরে না,প্রাণ ভরে না,কেবল ফাঁকি,
কি লাভ তবে সে সব পড়ে বলো দেখি?
শিশু হয়ে ভাবতে শিখি নতুন ক'রে,
রাশভারী সব লেখা যত থাকুক দূরে।

********************************
সমর কুমার সরকার / শিলিগুড়ি 
*********************************
Creative Commons License
কি আর লিখি ? by সমর কুমার সরকার / শিলিগুড়ি is licensed under a Creative Commons Attribution-NonCommercial-NoDerivs 3.0 Unported License.
Based on a work at samarkumarsarkar.blogspot.in


[<a rel="license" href="http://creativecommons.org/licenses/by-nc-nd/3.0/deed.en_US"><img alt="Creative Commons License" style="border-width:0" src="http://i.creativecommons.org/l/by-nc-nd/3.0/88x31.png" /></a><br /><span xmlns:dct="http://purl.org/dc/terms/" property="dct:title">কি আর লিখি ?</span> by <a xmlns:cc="http://creativecommons.org/ns#" href="http://www.blogger.com/blogger.g?blogID=1050337976214013732#editor/target=post;postID=6112280918622976158" property="cc:attributionName" rel="cc:attributionURL">সমর কুমার সরকার / শিলিগুড়ি </a> is licensed under a <a rel="license" href="http://creativecommons.org/licenses/by-nc-nd/3.0/deed.en_US">Creative Commons Attribution-NonCommercial-NoDerivs 3.0 Unported License</a>.<br />Based on a work at <a xmlns:dct="http://purl.org/dc/terms/" href="samarkumarsarkar.blogspot.in" rel="dct:source">samarkumarsarkar.blogspot.in</a>.]

Friday, October 26, 2012

রম্য রচনা: দুর্মুখের বিজয়া দশমী - সমর কুমার সরকার / শিলিগুড়ি



রম্য রচনা: দুর্মুখের বিজয়া দশমী
*********************

শারদীয় দুর্গা পূজার শেষ লগ্নে দেবীর পতিগৃহে যাত্রা শুরু হইয়াছে। দেবী অত্যন্ত বিষণ্ণ চিত্তে সজল নয়নে বিদায় লইতেছেন। ভক্তগণের উল্লাসের সীমা নাই। ভাবখানা যেন এই, পিতৃগৃহে বেশী দিন অবস্থিতি কন্যাদের পক্ষে কখনই সুখদায়ক হয় না, ফাঁক ফোঁকর দিয়া বেনো জলের প্রবেশ ঘটে। তাই বিনা বাক্য ব্যয়ে সসন্মানে পিতৃগৃহ পরিত্যাগ করিয়া যাইতেছ, ইহা কি কম আনন্দের ? রাজপথ দিয়া একের পর এক শোভাযাত্রা চলিয়াছে.....ঢাকীরা প্রাণপনে বাজাইতেছে "ঠাকুর থাকবে কতক্ষণ....ঠাকুর যাবে বিসর্জন। বাঁশের চেয়ে কঞ্চি র তেজ বেশী, কাঁসী বাদক ক্রমাগত তালে তালে ঠং...ঠং করিয়া তাল দিতেছে তাই তো...তাই তো.....। ঢাকীদের উল্লাসের সীমা নাই। পূর্বে শোভাযাত্রায়  ঢাক থাকিত সাকুল্যে দুই তিনটি, দীর্ঘ ক্ষণ বাজাইবার পরিশ্রমে হস্ত শিথিল হইলেই কর্মকর্তারা টের পাইয়া ঢাকীকে নিপীড়ণ করিতেন। এখন আর সে ভয় নাই। বিজ্ঞাপনের যুগে এক এক শোভাযাত্রায় বিজ্ঞাপন দাতা নির্ধারিত নুতন রঙীন ধুতি ও বুকে ছাপমারা গেঞ্জি পরিহিত ২০-২৫ জন ঢাকী মহা কোলাহলে নাচিতে নাচিতে বিক্রম প্রকাশ করিতেছে। ঢাকের গাত্রে সুশোভিত বস্ত্রের ঝালর। ঢাকের পিছন দিকে বন্যজীবন নিয়ন্ত্রণ আইন কে বৃদ্ধাঙ্গুষ্ঠ দেখাইয়া শত শত বক ও সারস হত্যা করিয়া সংগ্রহ করা বকের পালকের ধ্বজা হনুমানের লাঙুলের ন্যায় আন্দোলিত হইতেছে। শোভাযাত্রা কিছু দূর যাইবার পরেই এক এক স্থানে দণ্ডায়মান হয় ঢাকী দিগের মহড়া জনসমক্ষে প্রদর্শন করিবার জন্য। কারণ, বিজ্ঞাপনের শর্তই যে এইরুপ। ঢাকীগণও মোবাইল মারফত পূর্বেই গৃহে এবং গ্রামবাসী দিগকে সংবাদ প্রেরণ করিয়াছে, অমুক চ্যানেলে আমাদের শোভাযাত্রা দেখাইবে, তোমরা আমাদের বিক্রম নিজ চক্ষে দর্শন করিয়া ধন্য হইয়ো। দুইদিকে সারিবদ্ধ ঢাকীগণ কোমর দুলাইয়ালম্ফ প্রদান করিয়া আপন আপন শৈলী প্রদর্শন করিতেছে।

রাজ পথের পাশেই আমার ফ্ল্যাট, দোতলার বেলকনি হইতে ক্রমাগত ঢাক এর গুর গুর শব্দে মনের মধ্যে কেমন কুরকুর করিতে লাগিল। এই তো সে দিনের কথা ….তখন সদ্য যুবক….এমনই শরতের মনোরম অপরাহ্নে, বেশ কয়েক পেগ বিলাতি ঔষধ সেবন করিয়া, রাঙা রাঙা ঢুলু ঢুলু চোখে  দলবল পরিবৃত হইয়া  ধুনুচি হস্তে কয়েক মাইল রাস্তা কতই না নৃত্য করিতে করিতে মায়ের শোকে অস্রু বিসর্জন করিয়াছি। কেন যে গৃহী হইলাম কে জানে ! আজ ইচ্ছা থাকিলেও উপায় নাই। যদি রাস্তায় ঐ রূপ উদ্দাম নৃত্য করি, তবে ছেলে বা মেয়ের বন্ধু বান্ধবীরা আঙুল দিয়া দেখাইবে, দেখ্ দেখ্ অমুকের বাপের কি ঢং ! সংসার বিষম নীরস বস্তু, উপরে সরস দেখাইলেও ভিতরে জলশূণ্য নারিকেলের ন্যায়। যে কারণে মূর্খ ব্যতীত জ্ঞান তাপস ব্যক্তিগণ কদাচিৎ গৃহী হন না। মনের এই দুঃসহ অবস্থা কে সংবরণে অপারগ হইয়া পোশাক পরিবর্তন শুরু করিলাম।  কি জানি কি ভাবিয়া টাইট ফিটিং প্যান্ট, স্পোর্টস টি শার্ট, রিবকের জুতা পড়িয়া নীচে নামিলাম। গৃহিণী বায়না ধরিলেন, আমাকেও সঙ্গে লইয়া চলো, মহানন্দা নদীর তীরে মায়ের বিসর্জন দেখিয়া আসি। আমি আতান্তরে পড়িয়া তাহাকে বলিলাম, এতক্ষণ ব্যালকনিতে দাঁড়াইয়া কি দেখিলে ? এই কোলাহলের মধ্যে গৃহস্থ ঘরণীর বাহির না হওয়াইবাঞ্ছনীয়।

ক্ষুদ্র রাজপথ হইতে প্রধান রাজপথে আসিয়া আমার তো চক্ষু চড়ক গাছ। প্রতিটি শোভা যাত্রায় প্রতিমা র সঙ্গে নানা বয়সের শত শত মহিলা এবং শত শত নানা বয়সের পুরুষ উদ্দাম নৃত্য করিতে করিতে নদীর ঘাটের দিকে আগুয়ান। দেবী দুর্গা অসুর নিধনের পুর্বে মাধ্বী নামক সুরা পান করিয়া উন্মত্ত হইয়াছিলেন, নয় তো অসুর বধ সম্ভব ছিল না। চণ্ডী পাঠের সেই শিক্ষা বর্তমানে সমাজের সর্বস্তরে প্রচলিত। উন্নত মানের সুরা পান ব্যতীত লেখকে লেখিতে পারেন না,গায়কে গাহিতে পারেন না, ইঞ্জিনীয়ার বাড়ীর নকশা ভুল করেন, চিকিৎসকে হাতের অপারেশন করিতে গিয়া পায়ের অপারেশন করিয়া বসেন। আর এ তো মাতৃদেহ বিসর্জনের গুরু দায়ীত্ব। আর সুরা পান না করিয়া উপায় ই বা কি ? মাগগী গণ্ডার বাজারে প্রতিদিন দুপুরে ৩০ গ্রাম ওজনের একখণ্ড মৎস্যের টুকরা আর সপ্তাহে একদিন বা দুই দিন ২-৩ টুকরা হিমায়িত আরামবাগের চিকেন খাইয়া শরীরে যে পরিমাণ শক্তির সঞ্চার হয়, তাহাতে এক মাইল পথ হাঁটিলেই শরীরের সমস্ত শক্তি নিঃশেষ হয়, আর এ তো দীর্ঘ ৫-৬ মাইল রাস্তা উদ্দাম নৃত্যের কসরৎ।  তা শোভাযাত্রা গুলি দেখিয়া পূর্বের অভিজ্ঞতায় মালুম হইল, পুরুষেরা প্রায় সকলেই অমৃত সুধা পান করিয়া প্রবল তেজে বলীয়ান। তাহাদের নিজেদের তেজে তাহারা নিজেই অস্থির। কাহারো জামার হয়তো একদিকের হাতা শুদ্ধ কিছুটা অংশ গায়ে লতপত করিতেছে, কাহারও জামা কোমরে বাঁধা, কেউ বা জামা ছিঁড়িয়া মাথায় পাগড়ী বাঁধিয়াছে। কাহারও জামা হয়তো কেহ পিছন হইতে টানিয়া সম্পুর্ণ ছিঁড়িয়া দিয়াছে, খালি গলা হইতে কিছুটা অংশ টাই এর মত ঝুলিতেছে । অস্ত্র না হইলে পুরুষ মানুষের বিক্রম প্রকাশিত হয় ?  দেবী তথা অসুরের সমস্ত অস্ত্র এখন সব মদমত্ত যুবকদের হস্তে। কাহারো হস্তে দেবীর ত্রিশূল, কাহারও হস্তে খড়্গ, কাহারও হস্তে চক্র, এমন কি কেহ আবার অস্ত্রের অভাবে গেরিলা যুদ্ধের নিয়মে সরস্বতীর বীণা কেই প্রবল বিক্রমে অস্ত্রের ন্যায় দুলাইতেছে। একজনকে দেখিলাম গণেশের ক্রোড় হইতে কলা বৌ কে হরণ করিয়া, তাহার বস্ত্র নিজে প্যান্টের উপর পরিধান করিয়া, উলঙ্গ কদলী বৃক্ষকে স্কন্ধে লইয়া, মাথায় ঘোমটা দিয়া খেমটা নাচিতেছে। মুহুর্মূহু দুর্গা মাঈ কি..জয়...দুর্গা মাঈ কি..জয় ধ্বনি ও ধূনুচির ধোঁয়াতে বায়ুমণ্ডল আলোড়িত।

ভাবিয়া ছিলাম,শোভাযাত্রায় অংশ গ্রহণ কারী মহিলাদের বিষয়ে কোন কথা লিখিব না। কিন্তু ভাবিয়া দেখিলাম, সত্য গোপন হেতু যে পাপ জন্মিবে, তাহার ফলে মৃত্যুর পরে যম দূতেরা তপ্ত শলাকা দ্বারা আমার জিহ্বা ছেদন করিবে। তাই বাধ্য হইয়াই লিখিতে হইল। আগে নৃত্যের অধিকার ছিল একমাত্র পুরুষ জাতির, মহিলারা শোভা যাত্রায় গেলে ট্রাকের উপরে দণ্ডায়মান অবস্থায় থাকিতেন, নচেৎ পদব্রজে নিতান্ত মহিলা সূচক ব্রীড়তার সহিত গমন করিতেন। কিন্তু সময়ের পরিবর্তনে রুচির পরিবর্তন ঘটিয়াছে। এখন মহিলারা প্রকাশ্যেই বাংলা ব্যাণ্ডের গানের সহিত নৃত্য করিয়া যথেষ্ট প্রশংসা প্রাপ্তা হন।  তাই  তাহাদের প্রকাশ্যে রাজপথে নৃত্যের আর কোনরূপ বিধি নিষেধ নাই। অধিকাংশ শোভাযাত্রায় ই ঢাকের সহিত ব্যাণ্ড পার্টি ও রহিয়াছে। তাহারা ক্যাসিয়ো সহযোগে  যে সকল চটুল সুর জগঝম্প লয়ে  বাজাইতেছেন, তাহা শুনিয়া মৃত মানুষেও জাগিয়া উঠিবে। "নাচ মেরে বুলবুল...পয়সা মিলেগা...," "চোলি কা পিছে ক্যা হ্যায়...চোলি কা পিছে...," "বিড়ি জ্বালাই লে জিগর সে পিয়া......" ইত্যবৎ বিদায় সম্ভাষণ সূচক বাদ্যের সহিত নাচিবে না, তো প্রতিভার বিকাশ ঘটিবে কি রূপে ? তা সারা মুখে লাল সিঁদুর মাখা, ঘামে ভিজা শরীরে মহিলারা কি নৃত্যই না  করিতেছে। কেহ হিপ হপ তো কেহ কোমর দোলানো বিহু নাচ, কেহ বা কথাকলি, কুচিপুরী,বা মণিপুরীর ন্যায় শুধু শরীরের উপরিভাগ দোলাইতেছে, কেহ বা জীবনে একবার মাত্র "ধানের ক্ষেতে রৌদ্রছায়ায় লুকোচুরির খেলা " গানের সহিত নাচিয়া ছিল, এক্ষণে প্রতিভার গুণে সেই একই নাচ বিড়ি জ্বালাই লে গানের সহিত নাচিতেছে। প্রতিভার এইরূপ ক্রমবিকাশ দেবীর কৃপা ব্যতিরেকে অসম্ভব। আহা এমত অভূতপূর্ব দৃশ্য সকল পরিদর্শনে চিত্ত সাতিশয় পুলকিত ও আমোদিত হইল।

কিন্তু  কিছুক্ষণের মধ্যেই অনুভব করিলাম,আমার শরীর টা যেন ভিতরে ভিতরে ছন্দের দোলায় দুলিতেছে। শুষ্ক বীজ যেমন উপযুক্ত আলো ও জলের সংস্পর্শে আপনা আপনি ব্যাকুল হইয়া উঠে, আমারো বুঝি বা সেইরূপ অবস্থা। সুদীর্ঘ কাল এই শহরে বাস, বহু পূজার উদ্যোক্তাদের সহিত ব্যক্তিগত পরিচয় বর্তমান, বহু তরুণ তরুণী আমাকে চিনে। হঠাৎ এমনই এক অতি পরিচিত  ক্লাবের শোভা যাত্রার পার্শ্বে উপস্থিত হইলাম।  এতক্ষণ অনেক পরিচিত শোভা যাত্রা হইতেই পরিচিত ব্যক্তিরা হাত নাড়িয়া শুভেচ্ছা জানাইয়াছেন, আমি ও তাহাদের প্রত্যাভিবাদন জ্ঞাপন করিয়াছি।  কিন্তু এক্ষেত্রে তাহা সম্ভব হইল না।  অতি পরিচিত দুই যুবক আনন্দের আতিশয্যে আমাকে হঠাৎ প্রবল আকর্ষণে তাহাদের চৌকোণা দড়ির ঘেরাওয়ের মধ্যে টানিয়া লইলেন আপনারা দেখিয়াছেন ,সকল পূজার শোভাযাত্রাতেই একদল নিবেদিত প্রাণ গাট্টা গোট্টা যুবক বা মধ্যবয়স্ক মানুষ  হাতে হাতে দড়ি ধরিয়া লক্ষণের গণ্ডীর মত এক আয়তাকৃতি চৌখুপির সৃষ্টি করে। শোভাযাত্রার সর্বাগ্রভাগে থাকে পথ প্রদর্শকের দল ও ঢাকীর দল, তৎপরে চৌখুপির মধ্যে নৃত্যরত পুরুষ ও মহিলা নৃত্যশিল্পীর দল, তৎপরে ব্যাণ্ড পার্টির বাদক দল ও সর্বশেষে দুইটি বা তিনটি আলোকমালা সজ্জিত ট্রাকে প্রতিমা সকল। কাজেই চৌখুপির সন্মুখভাগ ও পশ্চাদ্ভাগ সুরক্ষিত, কিন্তু বাম ও দক্ষিণ পার্শ্বে চলমান জনস্রোতের হাত হইতে এই নৃত্যশিল্পীদের রক্ষা করিবার প্রয়াসে ঐ সকল নিবেদিত প্রাণ ব্যক্তিগণ জনতার দিকে পৃষ্ঠদেশ রাখিয়া গণ্ডীর সুরক্ষা প্রদান করেন। বন্ধন দেখিলেই মানুষের বন্ধন অতিক্রম করিবার ইচ্ছা জাগে , তাই প্রায়ই যুবক ও যুবতী দের কেহ কেহ বন্ধন অতিক্রম করিয়া উন্মুক্ত দর্শকের সামনে উপস্থিত হইয়া তাহার নৃত্য পরিবেশনের মাধ্যমে বাহবা কুড়াইবার চেষ্টা করেন। তখন ঐ কঠোর সুরক্ষা দল তাহাদের ঠেলা মারিয়া আবার দড়ির চৌখুপির মধ্যে প্রবেশ করাইয়া দেয়। এতক্ষণ আমি ছিলাম চলমান জনতার প্রতিনিধি , কিন্তু চৌখুপির মধ্যে প্রবেশ মাত্র আমি হইলাম তাহাদের একান্ত আপন জন - এইরূপ কিছু চিন্তা করিয়া দুই যুবক আমার দুই পার্শ্বে আসিয়া বিভিন্ন অঙ্গভঙ্গীর মাধ্যমে আমাকে উৎসাহিত করিল। তথাপি দীর্ঘ দিনের অনভ্যাস ও কন্যার পিতার অভিভাবক সুলভ গাম্ভীর্য হেতু তাহা প্রত্যাখ্যান করিলাম। কি ! এতবড় দুর্বুদ্ধি ! আমাদের দলের আপন জন হইয়াও তুমি নাচিবে না ? দুই সুদর্শনা মহিলা নৃত্যশিল্পী এবারে আমার সঙ্কল্প ভঙ্গের উদ্দেশ্যে অগ্রসর হইলেন। এই নারীগণের শক্তি মহান। ইহারা নৃ্ত্যপটুতায় বিশ্বামিত্র মুনির তপোভঙ্গ করিয়াছেন, আমি তো কোন ছার !! ব্যাণ্ডে তখন বাজিতেছে ,"পড়শি কো চুলহা সে তাপ লেহি লো.....বিড়ি জালাই লে .. জিগর সে পিয়া.... জিগর মে বড়ি তাপ হ্যায়....", দুই নৃত্যশিল্পী মদালসা ভঙ্গী তে এমন ভাবে শরীর কাঁপাইলেন, স্থান কাল পাত্র ভুল হইল, পড়শির চুলহার সমস্ত তাপ আমার শরীর কে উত্তপ্ত করিল। জিগরে বিষম কম্পনের সৃষ্টি হইল, আমি প্রথমে দক্ষিণ পার্শ্বের স্কন্ধ ঝুঁকাইয়া তিনবার  দক্ষিণ বাহু ঝাঁকাইলাম, তৎপর অনুরূপ ভাবে বাম বাহু ঝুঁকাইলাম, সঙ্গে সঙ্গে  পদ-দ্বয়ের অগ্র পশ্চাত সঞ্চালনে আমার দীর্ঘ দিনের অধীত বিদ্যা সহসা ফিরিয়া আসিল। সাইকেল বা সাঁতার যেমন কেহ একবার শিখিলে জীবনে ভোলেন না, তেমনি বিসর্জনের শোভাযাত্রায় যাহার নাচিবার অভিজ্ঞতা আছে, সুযোগ পাইলেই সেই কুশলতা সময় মত জাগিয়া ওঠে।  নিমেষেই আমি  সকলের সাথে মিশিয়া গেলাম।

ছোট বড় , পুরুষ মহিলা ভেদ নাই , যে যেমন পারে নাচিতেছে। আমার মত পরিচিত রাশভারী ব্যক্তি কে পাইয়া যেন অনেকের বিশেষ সুবিধাই হইল, বেশ কিছু পরিচিত মহিলা আমাকে ঘিরিয়াই নাচিতে লাগিল। যদি বাড়ীতে মাত্রাতিরিক্ত নাচের কারণে কোন কিশোরী অভিভাবকের বকুনি খায় , তো সহজেই বলিতে পারিবে ,সমর জ্যেঠুর সঙ্গেই তো নাচিয়াছি, আর কাহারো সহিত তো নাচি নাই। যদি কোন ঈর্ষা পরায়ণ দুর্বল চিত্তের স্বামী তাহার স্ত্রীর বিড়ি জ্বালাই লে নাচের মৃদু সমালোচনা করিয়া শোক প্রকাশ করেন, তবে  দোষস্খালনের হেতু স্বরূপ সহজেই বলিতে পারিবে, দেখো তো সরকার বাবু এমন রাশভারী লোক, তিনি  কি নাচটাই না নাচিলেন ,আর তুমি ....ছি ! ৪০-৪৫ মিনিট পরেই টের পাইলাম হাঁপ ধরিতেছে, দীর্ঘ দিনের অনভ্যাস, তায় কোন রূপ সঞ্জীবনী সুধা পান করি নাই। কাজেই শরীরে ক্লান্তির উদ্রেক হইল। প্রশ্ন করিতে পারেন , এই যে এত মহিলা নাচিতেছেন, তাহাদের তো সুরার প্রয়োজন হয় না। সত্যের খাতিরে বলিতে ই হয়, পাড়ায় হাজার হাজার মহিলা বাস করেন, সকলেই তো বিসর্জন নৃত্যে অংশগ্রহণ করেন না। আজকাল কো এডুকেশন স্কুল ও কলেজের ছাত্র ছাত্রীরা হস্টেলে ও জন্মদিন পালন প্রভৃতি অনুষ্ঠানে স্বাভাবিক ভাবেই মদ্যপান করিয়া থাকে। অভিভাবকেরা স্ট্যাটাস রক্ষার তাগিদে জানিয়াও না জানার ভান করিয়া থাকেন। সন্ধ্যায় যে কোন পানশালায় গেলে দেখিবেন সেখানে মহিলারা কোন অংশেই কম নয়। তা ছাড়া পতিগণ নিজ গৃহে সুরাপান করিলে প্রায়শঃই স্ত্রী কে সাধাসাধি করেন, কলেজে সুরা পানে পোক্ত স্ত্রী কোনদিন খাই নাই ভাব দেখাইয়া দিব্যি স্বামী কে সঙ্গ দেন। আমাকে আর ঘাঁটাইয়ো না, আমি অনেকের মুখেই গন্ধ পাইয়াছিআমি কোন মতে সকল কে এড়াইয়া চৌখুপির বাহিরে আসিয়া জনতার সহিত মিশিয়া গেলাম। এতক্ষণ  ভীড়ে খেয়াল করি নাই, এবারে সহসা দৃষ্টিগোচর হইল, একাধিক কেবল টিভির ক্যামেরা রাজপথের দুই পার্শ্ব হইতে সমস্ত শোভা যাত্রা গুলির চিত্র গ্রহণ করিয়া সরাসরি গৃহে গৃহে সম্প্রচার করিতেছে।  ক্লান্ত দেহে নিরঞ্জন ঘাটে কয়েকটি মাত্র প্রতিমার নিরঞ্জন দেখিয়াই গৃহে প্রত্যাগমন করিলাম। গৃহিণী দ্বার উন্মোচন করিয়া বলিলেন , ভালই তো বিজয়া দশমী করিলে।  প্রত্যুত্তরে কহিলাম, হ্যা শুধুমাত্র কয়েকটি প্রতিমার নিরঞ্জন দেখিয়াই ফিরিয়া আসিয়াছি। গৃহিণী কহিলেন, হ্যা কেবল চ্যানেলে আমি বিড়ি জালাইলে নাচ ও হৃদয় পুড়াইলে মহিলা সবই প্রত্যক্ষ করিয়াছি। আমি বিনা বাক্য ব্যয়ে স্নান ঘরে প্রবেশ করিলাম। স্নান হইতে ফিরিয়া দেখিলাম, টেবিলে আমার খাবার ঢাকা দেওয়া আছে। গৃহিণর এই এক গুণ, প্রচণ্ড ক্রোধের সৃষ্টি হইলে কয়েক দিন বাক্য বিনিময় বন্ধ রাখেন, অথচ সময় মত চা, জলখাবার, ভোজন ইত্যাদি টেবিলে ঢাকা দিয়া রাখেন। নীরব প্রতিবাদের ও এক বিরাট শক্তি আছে। সুপ্ত আগ্নেয় গিরি কে জাগায় কোন মূর্খ ? আমি দায়সারা ভাবে খাদ্য গ্রহণ করিয়া সোফায়  শয়ন করিলাম (ইহাই চিরাচরিত রীতি)

অতএব সুহৃদ মিত্রবর্গ, বিজয়ার প্রীতি ও শুভেচ্ছা গ্রহণ করিয়ো। বড় সাধ ছিল, তোমাদের সবাইকে নিমন্ত্রণ করিয়া আমার গৃহে আনয়ন করতঃ সুমিষ্ট বাক্য, উত্তম কড়াপাকে র সন্দেশ, ঘৃতপক্ক ফুলকো লুচি , কাশ্মিরী আলুর দম ও সুশীতল হিমায়িত পানীয়ের দ্বারা তোমাদের সন্তুষ্টি বিধান করি।  কিন্তু কপালের দোষে আমি সকল সুযোগ হারাইলাম।  দুঃখিত হইয়ো না, আবার নিশ্চয় সামনের বৎসর তোমাদের নিমন্ত্রণের সুযোগ পাইব।


****************************
সমর কুমার সরকার / শিলিগুড়ি 
****************************

Creative Commons License
রম্য রচনা: দুর্মুখের বিজয়া দশমী by সমর কুমার সরকার / শিলিগুড়ি is licensed under a Creative Commons Attribution 3.0 Unported License.Based on a work at samarkumarsarkar.blogspot.in

[<a rel="license" href="http://creativecommons.org/licenses/by/3.0/deed.en_US"><img alt="Creative Commons License" style="border-width:0" src="http://i.creativecommons.org/l/by/3.0/88x31.png" /></a><br /><span xmlns:dct="http://purl.org/dc/terms/" property="dct:title">রম্য রচনা: দুর্মুখের বিজয়া দশমী </span> by <a xmlns:cc="http://creativecommons.org/ns#" href="http://www.blogger.com/blogger.g?blogID=1050337976214013732#editor/target=post;postID=8957628161370077659" property="cc:attributionName" rel="cc:attributionURL">সমর কুমার সরকার / শিলিগুড়ি </a> is licensed under a <a rel="license" href="http://creativecommons.org/licenses/by/3.0/deed.en_US">Creative Commons Attribution 3.0 Unported License</a>.<br />Based on a work at <a xmlns:dct="http://purl.org/dc/terms/" href="samarkumarsarkar.blogspot.in" rel="dct:source">samarkumarsarkar.blogspot.in</a>.]

Thursday, October 25, 2012

বিসর্জন - সমর কুমার সরকার / শিলিগুড়ি



বিসর্জন

দশমী পূজার শেষে নমি প্রতিমারে,
শাস্ত্রবিৎ পুরোহিত কহে করজোড়ে -
"আবাহন করেছিনু তব শ্রী চরণ,
আপন ভুবনে দেবী দিলা দরশন।
শাস্ত্রমতে আরাধনা,পূজা সমাপনে,
অপার ঐশ্বর্য সুখ জাগিয়াছে মনে।
কহ দেবী,কি প্রকারে জানাব বিদায়,
আপন মাতারে কেহ ছাড়িতে কি চায় ?
দেবী মহামায়া তুমি,মায়া মুক্ত নও ?
কৈলাসে আপন গৃহে ফিরে কেন যাও?
জগৎ মাঝারে কিছু চিরস্থায়ী নয়,
গৃহ হতে গৃহান্তরে সবে আসে যায়।
জোয়ারে উথাল জল,ফিরে ভাঁটি পানে,
মহামায়া মায়া মুক্ত হও বিসর্জনে।"

*****************************
সমর কুমার সরকার / শিলিগুড়ি
*****************************
Creative Commons License
বিসর্জন by সমর কুমার সরকার / শিলিগুড়ি is licensed under a Creative Commons Attribution-NonCommercial-NoDerivs 3.0 Unported License.Based on a work at samarkumarsarkar.blogspot.in


[<a rel="license" href="http://creativecommons.org/licenses/by-nc-nd/3.0/deed.en_US"><img alt="Creative Commons License" style="border-width:0" src="http://i.creativecommons.org/l/by-nc-nd/3.0/88x31.png" /></a><br /><span xmlns:dct="http://purl.org/dc/terms/" property="dct:title">বিসর্জন</span> by <a xmlns:cc="http://creativecommons.org/ns#" href="http://www.blogger.com/blogger.g?blogID=1050337976214013732#editor/target=post;postID=5356124616913529345" property="cc:attributionName" rel="cc:attributionURL">সমর কুমার সরকার / শিলিগুড়ি </a> is licensed under a <a rel="license" href="http://creativecommons.org/licenses/by-nc-nd/3.0/deed.en_US">Creative Commons Attribution-NonCommercial-NoDerivs 3.0 Unported License</a>.<br />Based on a work at <a xmlns:dct="http://purl.org/dc/terms/" href="samarkumarsarkar.blogspot.in" rel="dct:source">samarkumarsarkar.blogspot.in</a>.]

Monday, October 22, 2012

বুড়ো বুড়ীর নষ্ট সকাল - সমর কুমার সরকার / শিলিগুড়ি



বুড়ো বুড়ীর নষ্ট সকাল

বুড়ো বুড়ীর ঝগড়া শুরু,ঘুমের থেকে উঠে,
আয়নাতে মুখ দেখে বুড়োর পিত্তি গেছে চ'টে।
বুড়ী আজ ও খুব তেজালো,বুড়ো টা কম-জোরি,
সন্ধ্যা রাতেই রুগ্ন বুড়ো ঘুমায় তাড়াতাড়ি।
পূজার আনন্দেতে  বুড়ীর মাথার তো নেই ঠিক,
ঘুমের আগে লুকিয়ে মাখে ঠোঁটে লিপিস্টিক।
গভীর ঘুমে স্বপ্ন দেখে,নয় তো সে আর বুড়ী,
বয়েস কমে আগের মতই হয়েছে সুন্দরী।

দেখছে ঘুরে দুর্গা ঠাকুর প্যাণ্ডেলে,প্যাণ্ডেলে,
অবাক হয়ে তাকিয়ে আছে,পাড়ার যত ছেলে।
স্বপনে কি জাগরণে স্বভাব এক ই থাকে,
স্বপ্নে বুড়ী দেখতে পেলো প্রেমিক খোকন দা কে।
তার সাথে তে প্রণয় লীলা চললো অনেক ক্ষণ,
ঘন ঘন প্রেমিক কে সে দিলো যে চুম্বন।
বুড়ো উঠে তাকিয়ে দেখে,এ কি ! বাপ রে বাপ !
লিপিস্টিকের লাল রঙে তে আঁকা  ঠোঁটের ছাপ।

বুড়ো চ'টে লাল হ'লো,আর কালো যে মুখ খানা,
বুড়ীর আগে প্রেমিক ছিলো,সেটা যে তার জানা।
এমন চুমু বুড়ী তাকে দেয় নি কোন দিন,
ব্যাপার টা কি বুঝতে পেরে গা করে ঘিন্ ঘিন্।
মনে যাদের পাপের বাসা,পাপ লুকিয়ে রাখে,
সুযোগ পেলেই মনের মাঝে সে সব ফিরে দেখে।
বুড়ো ভাবে,"খোকন দা কে জানালে সোহাগ,
মাঝের থেকে গেঞ্জি টা তে লাগলো যে লাল দাগ।"

হঠাৎ বুড়ী জেগে উঠে,বুঝতে পারে ভুল,
হেসে বলে,আমার জন্যে এনো গোলাপ ফুল।
কাল রাতে যে দিলাম তোমায়,অনেক ভালবাসা,
তার বদলে রক্ত গোলাপ চাই যে আমার খাসা।
বুড়ো রেগে দেয় গালাগাল,"হারামজাদী,শালী,
এই বয়েসে আমার মুখে লাগাস যে চূণ-কালি !
ফুল দেব,না ঘেন্টু দেব,পাজী,হতচ্ছাড়া,
লুকিয়ে পীরিত কার সাথে তে ? ভাঙবো দাঁতের গোড়া।

গেঞ্জি খেলি,মন পুড়ালি পূজার সকালেতে,
ইচ্ছে আমার করছে না আর,তোর হাতে তে খেতে।"
এই কথাতেই বুড়ীর সাথে ঝগড়া হলো শুরু,
বলল বুড়ী মুখ বেঁকিয়ে,"আস্ত বলদ গরু,
মুরোদ তো নেই এতটুকু,ফোঁসফোঁসানি সার,
আমার হাতে না খাবে তো,দায় পড়েছে কার ?
নতুন গেঞ্জি কিনে আনো,আনো নতুন বউ,
সাধ্যে তোমার না কুলালে,ক'রো না ঘেউ ঘেউ।"

বুড়ো বলে,"খোকন দা কে পেলে হাতের কাছে,
ঘুচিয়ে দিতাম তোর পীরিতি,সে ক্ষমতা আছে।
জানা ছিল এ সব কথা,তোর রূপে তে ভুলে,
বিয়ে করে জীবন দেখি বৃথাই গেলো জলে।"
কথার পিঠে কথা ওঠে,ঝগড়া চলে বেড়ে,
বুড়ো-বুড়ীর কেচ্ছা এমন বাড়ছে ঘরে ঘরে।
পাপী বুড়ো-বুড়ী যারা,বলছি কানে কানে,
এক সাথেতে শুলে,বালিশ রাখুন যে মাঝ খানে।

*********************************
সমর কুমার সরকার / শিলিগুড়ি
*********************************
Creative Commons License
বুড়ো বুড়ীর নষ্ট সকাল by সমর কুমার সরকার / শিলিগুড়ি is licensed under a Creative Commons Attribution-NonCommercial-NoDerivs 3.0 Unported License.Based on a work at samarkumarsarkar.blogspot.in


[<a rel="license" href="http://creativecommons.org/licenses/by-nc-nd/3.0/deed.en_US"><img alt="Creative Commons License" style="border-width:0" src="http://i.creativecommons.org/l/by-nc-nd/3.0/88x31.png" /></a><br /><span xmlns:dct="http://purl.org/dc/terms/" property="dct:title">বুড়ো বুড়ীর নষ্ট সকাল</span> by <a xmlns:cc="http://creativecommons.org/ns#" href="http://www.blogger.com/blogger.g?blogID=1050337976214013732#editor/target=post;postID=5757050444127366749" property="cc:attributionName" rel="cc:attributionURL"> সমর কুমার সরকার / শিলিগুড়ি</a> is licensed under a <a rel="license" href="http://creativecommons.org/licenses/by-nc-nd/3.0/deed.en_US">Creative Commons Attribution-NonCommercial-NoDerivs 3.0 Unported License</a>.<br />Based on a work at <a xmlns:dct="http://purl.org/dc/terms/" href="samarkumarsarkar.blogspot.in" rel="dct:source">samarkumarsarkar.blogspot.in</a>.]




Sunday, October 21, 2012

মাতৃপূজায় ভিখারীর আক্ষেপ - সমর কুমার সরকার / শিলিগুড়ি




মাতৃপূজায় ভিখারীর আক্ষেপ

ভিখারী কাঁদিয়া বলে,মা গো অসুরারি
ধন্য মানুষের মন,দেখে লাজে মরি!
রাজার দুলালী তুমি,শিবের ঘরণী,
কাশীধামে অন্নপূর্ণা,খাও ক্ষীর,ননী।
পেটের ক্ষুধার জ্বালা টের পাও না কো,
রত্ন অলঙ্কারে দেহ মুড়ে সুখে থাকো।
কোটি লোকে দেয় পূজা,ভোগ রকমারি,
আমরা ভিখারী,ঘরে চড়ে না তো হাঁড়ি।
তোমার অভাব নাই,তা ও পাও পূজা,
তেল দেয় লোকে,যার মাথা তেলে ভেজা।
আমরা দুয়ারে গেলে বলে দূর দূর!
তোমার বেলায় কেন পাল্টে যাবে সুর?
নিজ স্বার্থ ছাড়া মা গো দুনিয়া অচল,
লোকে খোঁজে তারে,যার ক্ষমতা অটল।
তেল দিয়ে খুশী রাখে,তুষ্ট করে মন,
বিনিময়ে চায়,দাও যশ,রত্ন,ধন।
তোমার ক্ষমতা আছে,দিতে পারো সবে,
তাই সবে করে পূজা,মাতে উৎসবে।
আমরা অভাগা,কেউ ফিরে না তাকায়,
দুঃখে চোখে আসে জল,তবু হাসি পায়।
ভক্তি হলো মহা ত্যাগ,নীরবেতে পূজা,
আপন হৃদয় মাঝে দেবতারে খোঁজা।
তোমার পূজায় মা গো এত সমারোহ
করে যারা,অন্তরেতে ভেবে দেখে কেহ ?
এক সমাজেতে বাস,থাকি পাশাপাশি,
কেউ তো ডাকে না এসে,বলে ভালবাসি-
"মায়ের পূজা তে এসে দাও সবে যোগ,
এক সাথে ভাগ ক'রে খাই মহাভোগ।"।
এ জগতে ভক্ত যার আছে টাকা-কড়ি,
আমরা যে ভক্তিহীন পথের ভিখারী।
যে সমাজে এত ভেদ,পূজা সেথা ফাঁকি
তোমার পূজায় তাই দূরে সরে থাকি।

*********************************
সমর কুমার সরকার / শিলিগুড়ি
**********************************
Creative Commons License
মাতৃপূজায় ভিখারীর আক্ষেপ by সমর কুমার সরকার / শিলিগুড়িis licensed under a Creative Commons Attribution-NonCommercial-NoDerivs 3.0 Unported License.
Based on a work at samarkumarsarkar.blogspot.in


[<a rel="license" href="http://creativecommons.org/licenses/by-nc-nd/3.0/deed.en_US"><img alt="Creative Commons License" style="border-width:0" src="http://i.creativecommons.org/l/by-nc-nd/3.0/88x31.png" /></a><br /><span xmlns:dct="http://purl.org/dc/terms/" property="dct:title">মাতৃপূজায় ভিখারীর আক্ষেপ</span> by <a xmlns:cc="http://creativecommons.org/ns#" href="http://www.blogger.com/blogger.g?blogID=1050337976214013732#editor/target=post;postID=3311316628308982115" property="cc:attributionName" rel="cc:attributionURL">সমর কুমার সরকার / শিলিগুড়ি</a> is licensed under a <a rel="license" href="http://creativecommons.org/licenses/by-nc-nd/3.0/deed.en_US">Creative Commons Attribution-NonCommercial-NoDerivs 3.0 Unported License</a>.<br />Based on a work at <a xmlns:dct="http://purl.org/dc/terms/" href="samarkumarsarkar.blogspot.in" rel="dct:source">samarkumarsarkar.blogspot.in</a>.]


Monday, October 15, 2012

প্রেমের আগমনী - সমর কুমার সরকার / শিলিগুড়ি




প্রেমের আগমনী

শুনছ সুমি ? কাছে এসো,জানলা টা দাও খুলে,
তাকিয়ে দেখো,গাছ্টা কেমন সাদা ফুলে ফুলে।
শিউলি ফুলের মৃদু সুবাস হাওয়ায় মাখামাখি,
পাশে বসো,আজকে আবার নতুন করে দেখি।
এমন ই এক শরৎ কালের দিন কি মনে পড়ে?
ফুল তুলতে বেরিয়ে ছিলে,শিশির মাখা ভোরে!
তখন তুমি রাইকিশোরী,মাথায় বাঁধো বেণী।
কাছাকাছিই বাড়ী তোমার,নাম 'সুমি' তা জানি।
জানা ছিল,ফুল কুড়ানী আসবে ভোরের বেলা,
গাছের তলায় দাঁড়িয়ে ছিলাম,হাতে নিয়ে ডালা।
ভোরের আলোয় ভ্রমর কালো তোমার চোখের তারা,
হানলে যখন আমার পানে হলাম দিশাহারা।
অজানা এক আকর্ষণে রোমাঞ্চিত হয়ে,
ভেবেছিলাম,"পেতাম যদি সুন্দরী এই মেয়ে।"
এক সাথেতে ফুল কুড়ানো,ভাল লাগার ঘোরে,
এমনই এক শিউলি ফোটা শরৎ কালের ভোরে।

তার পরেতে পাড়ার পূজোয়,মহাষ্টমীর দিনে,
লাল পেড়ে এক হলুদ শাড়ী,মন যে দেখি টানে।
সোনার বরণ হলুদ পাখী,কোথায় ছিলে দূরে,
উড়ে এসে বসলে আমার পাশের ই চেয়ারে।
শুরু হলো,আড় চোখেতে তাকিয়ে দেখার খেলা,
যাচ্ছ কোথায় ? এখন ও যে লজ্জা তোমার মেলা!
চোখে চোখে নীরব কথা,মনের কানাকানি,
শূন্য পথে ভাব বিনিময়,প্রেমের আগমনী।
পুরোহিতে বলল হেঁকে,"অঞ্জলি দাও সবে",
তোমার পিছেই দাঁড়িয়ে গেলাম,ফুল হাতে নীরবে।
অঞ্জলি তো আর কিছু নয়,আকুল আবেদন,
রূপ,জয়,যশ দিয়ো মা,দিয়ো পুত্র,ধন।
আমি কি চাই বুঝতে পারি,মায়েরে জানাই,
"হলুদ শাড়ীর রাইকিশোরী চাই মা,আমার চাই।"

মন্ত্র শেষে ফুল ছুঁড়ে দেয়,সবাই দেবীর পায়,
আমার ছোঁড়া ফুল পড়ে যে তোমার ই মাথায়।

আহা ! আবার পালাচ্ছ যে,লজ্জা কিসের এত ?

তোমার কথা পড়ছে মনে,স্পষ্ট ছবির মত।
দিনে ছিল হলুদ শাড়ী,রাত্রে নীলাম্বরী,
নিয়ন আলোর রঙীন ছটায় কিশোরী নীল পরী।
পাগল হলাম মনে-প্রাণে,পেতেই হবে একে,
কইতে হবে মনের কথা,কপালে যা থাকে!
চেনা-জানা,পাড়ার মেয়ে,আছে পরিচয়,
'ভালবাসি' বলতে তবে কিসের এত ভয়?
কাছে গিয়ে বলি - "দেখো,ঠাকুর টা কি ভালো !"
লক্ষ্য করি,তোমার চোখে যেন খুশীর আলো।
বললে তুমি - "ঠাকুর ভালো,তাই তো বসে আছি,
আপনি কেন বন্ধু ছেড়ে আমার কাছাকাছি ?"
চমকে বলি - "ভাবছ যে সব,সে সব কিছু নয়,
পূজার দিনে দেখা হলে,বলতে কিছু হয়।"
বললে হেসে - "পাড়ার মেয়ে অনেক গুলোই আছে,
যান না,গিয়ে গল্প করুন,বসে ওদের কাছে।"

এত ফাজিল মেয়ে তুমি,তখন কি আর জানি ?

লজ্জা তে গাল হলো যে লাল,বুকেতে কাঁপুনি।
থতমত খেয়ে বলি - ওরা তো আছেই.....
তার পরে আর বলব কি যে হারিয়ে ফেলি খেই।
বললে তুমি - "আপনি দেখি,এক্কেবারে বোকা,
সকাল থেকে দেখছি শুধু,বসে আছেন একা।
পূজার দিনে ছেলেগুলোর স্ফুর্তি দেখুন মনে,
কেউ কি এমন বসে আছে,বকের মত ধ্যানে ?
বাজি পোড়ান,ঘুরে বেড়ান প্যাণ্ডেলে-প্যাণ্ডেলে,
বেড়িয়ে আসুন সঙ্গে নিয়ে বান্ধবী কেউ পেলে।
পূজা তো আর রোজ আসে না,সারা বছর ফাঁকা,
চালাক যারা ঘুরে বেড়ায়,বসে থাকে ন্যাকা।"
জানো ? তখন অপমানে জ্বলছিল এ বুক,
নীলাম্বরী,তুমি আমায় দিলে এমন দুঃখ ?
শুকনো মুখে তক্ষুনি যে ফিরে গেলাম বাড়ী,
আমি ন্যাকা,আমি বোকা,ঠিক ই তো সুন্দরী।

খুব যে দেখি হাসছ হি হি,যেতাম যদি মরে,

তবে কি আর পেতে তুমি,আমায় আপন ক'রে ?
যা বলছিলাম,নবমী তে লাগছিল না যে ভালো,
বসে ছিলাম এক কোণে-তে,অল্প যেথায় আলো।
রাত পোহালেই দশমী তে মা নেবে বিদায়,
ঢাকের আওয়াজ,আরতি নাচ,সামনে যাওয়াই দায়।
হাসনুহানার সুবাস পেলাম,হঠাৎ অচেতনে,
আবছা কোন মূর্তি যেন আমারই পিছনে।
বললে তুমি- "আলোয় চলুন,পূজো টা কি ভালো !
অন্ধকারে কেন বসে,মুখ টা ক'রে কালো ?
ফুচকা খাবেন ? চলুন না ছাই,ওই দিকেতে যাই,
সারা টা দিন খুঁজে দেখি,আপনি কোথা ও নাই।
মনে হলো,লোকটা যে ঠিক চালাক তো নয় তত,
কি বলেছি,রাগ করেছে সত্যি বোকার মত!
পূজোর দিনে কারো মনে দুঃখ দিতে নাই,
হাতটা বাড়ান,এইটা রাখুন,আমি এখন যাই।"

পাজী মেয়ে,ধরিয়েছিলে প্রথম প্রেমের চিঠি,

তর সয় না,আলোয় গিয়ে আলগা করি মুঠি।
গোটা গোটা অক্ষরেতে লিখেছিলে তুমি - 
"সমর দাদা,তোমায় বড় ভালবাসি আমি।
লেখা-পড়ায় সেরা তুমি,মনে ও তুমি সেরা,
বোকা বলেই ভালবেসে দিলাম তোমায় ধরা।
রাগ ক'রো না লক্ষ্মী আমার,করে দিয়ো ক্ষমা,
থাকলে রাজী,কালকে প'রো হলুদ রঙের জামা।"
সেই ধরালে হলুদ জামা,এখন ও ভুলি নি,
শরৎ এলেই হলুদ জামা আগেই কিনে আনি।
মন টা আজ ও একই আছে,একই তারে বাঁধা,
কালের স্রোতে সুর টা কেবল হয় না সঠিক সাধা।
আজ ও আমি স্বপ্ন দেখি,প'রে হলুদ শাড়ী,
সামনে তুমি দাঁড়িয়ে আছ,অষ্টাদশী নারী।
যা চলে যায়,আর কোন দিন,ফেরে না তা জানি,
শরৎ এলেই মনে জাগে প্রেমের আগমনী।

****************************************

সমর কুমার সরকার / শিলিগুড়ি
****************************************
Creative Commons License
প্রেমের আগমনী by সমর কুমার সরকার / শিলিগুড়ি is licensed under a Creative Commons Attribution-NonCommercial-NoDerivs 3.0 Unported License.Based on a work at samarkumarsarkar.blogspot.com

[<a rel="license" href="http://creativecommons.org/licenses/by-nc-nd/3.0/deed.en_US"><img alt="Creative Commons License" style="border-width:0" src="http://i.creativecommons.org/l/by-nc-nd/3.0/88x31.png" /></a><br /><span xmlns:dct="http://purl.org/dc/terms/" property="dct:title">প্রেমের আগমনী</span> by <a xmlns:cc="http://creativecommons.org/ns#" href="http://www.blogger.com/blogger.g?blogID=1050337976214013732#editor/target=post;postID=2627104420254108788" property="cc:attributionName" rel="cc:attributionURL">সমর কুমার সরকার / শিলিগুড়ি</a> is licensed under a <a rel="license" href="http://creativecommons.org/licenses/by-nc-nd/3.0/deed.en_US">Creative Commons Attribution-NonCommercial-NoDerivs 3.0 Unported License</a>.<br />Based on a work at <a xmlns:dct="http://purl.org/dc/terms/" href="samarkumarsarkar.blogspot.com" rel="dct:source">samarkumarsarkar.blogspot.com</a>.]



Sunday, October 14, 2012

রম্য রচনা: দেবীর আগমনী সংবাদ - সমর কুমার সরকার / শিলিগুড়ি


রম্য রচনা: দেবীর আগমনী সংবাদ


দেবর্ষি নারদের মুখ ভার,হৃদয়ে কণা মাত্র সুখানুভূতি নাই।সৃষ্টির আদি লগ্ন হইতে দেবতা, দানব, গন্ধর্ব, কিন্নর, মুনি, ঋষি, মায় নর কুল, সকলেই কলহ কালে ঘোর বিবাদের উদ্ভব হইলে, দেবর্ষি কে স্মরণ করিতেন। দেবর্ষি উৎফুল্ল চিত্তে স্বয়ং উপযাচক হইয়া বাদী ও বিবাদী উভয় পক্ষের নিকট গমন করিয়া এরূপ পরস্পর বিরুদ্ধ মন্ত্রণা দান করিতেন যে, কলহ ভয়াল রূপ ধারণ করিত, এবং অবশেষে দেবর্ষি যোগ্যতর পক্ষ অবলম্বন করিয়া তাহাকে বিবাদে জয়ী হইতে সাহায্য করিতেন। এই উপায়ে তিনি বিশেষ আত্মসুখ লাভ করিতেন এবং নিজের ও মহাত্মাদিগের মহিমা প্রচার করিতেন। কিন্তু বর্তমান কালে দেবতা দানব বা অন্যান্য সম্প্রদায়ের মধ্যে বিবাদ নাই বলিলেই চলে। মনুষ্যলোকের মনুষ্যেরা এখন স্বয়ং কলহ নিপুণ, নিজেরাই কলহ করেন, নিষ্পত্তি না হইলে আদালতের দ্বারস্থ হন। অতএব দেবর্ষির মহিমা এখন লুপ্ত প্রায়। হৃত গৌরব উদ্ধার হেতু নারদ মনস্থ করিলেন স্বর্গলোকের তিন দিকপাল ব্রহ্মা, বিষ্ণু ও মহেশ্বরের মধ্যে কোন একজনকে যদি কলহে প্ররোচিত করা যায়, তবে তাহার হৃত গৌরব পুনরুদ্ধারের পথ প্রশস্ত হয়। ব্রহ্মা একে অতি বৃদ্ধ, তায় পরম জ্ঞানী, তাহাকে কলহে প্ররোচিত করা দুষ্কর। বিষ্ণু দেবতা গণের মধ্যে সর্বাপেক্ষা চতুর, এবং তিনি দেবর্ষির উপাস্য দেবতা, সুতরাং এই পরিকল্পনা রূপায়ণ ও অসম্ভব। কৈলাসপতি মহেশ্বর একে ভোলে ভালা নেশাখোর, তায় পু্ত্র , কন্যা ও ভার্যা সহ এক পরিবারের প্রধান। দেবর্ষি জানেন, যিনি নেশাখোর, স্বভাব ক্ষ্যাপা এবং সংসার প্রতিপালনে নিমগ্ন, তাহাকে সহজেই কলহে লিপ্ত করানো সম্ভব। কিন্তু কলহতেও ক্ষেত্রের প্রয়োজনহয়। সুচতুর দেবর্ষি জানেন কলহের যত উৎস বিদ্যমান, তন্মধ্যে স্ত্রী জাতিই সর্বোৎকৃষ্ট। শরৎকাল আগত প্রায় , দেবী দুর্গা সপরিবারে মর্ত্যভূমে পিত্রালয় গমনের আয়োজনে ব্যস্ত। যদি বুদ্ধি বলে শিব ও পার্বতীর মধ্যে বিবাদের সূচনা সম্ভব হয়, তবে উপায় লাভ সম্ভব। অতএব, দেবর্ষি উপায় উদ্ভাবনে প্রবৃত্ত হইলেন।
দেবর্ষি মর্ত্যলোকের এক শপিং মল হইতে এক অত্যাধুনিক শক্তিশালী ল্যাপটপ উত্তোলন করিয়া মহেশ্বর সমীপে উপস্থিত হইয়া কহিলেন, "প্রভু, এই অমূল্য যন্ত্রে মর্ত্যের যাবতীয় লোকদিগের জীব লীলা প্রত্যক্ষ করুন, স্বয়ং ফেসবুক বা মুখ পুস্তিকাতে অংশ গ্রহণ করতঃ ভক্তদিগের সম্বন্ধে সম্যক অবগত হউন। অতঃপর দেবর্ষি মহেশ্বরকে ফেসবুকে ভোলানাথ মহেশ্বর নামকরণে একটি প্রোফাইল খুলিয়া দিলেন , এবং ফেসবুকে কি কি কার্যক্রম কি কি উপায়ে সম্পন্ন হয়, তাহা বিশদ রূপে বুঝাইয়া দিলেন। মহেশ্বর আমার বা আপনাদের মত চাকুরী বা ব্যবসায় নিযুক্ত নহেন, কাজেই অখণ্ড অবসর, তাই নুতনকে জানিবার প্রয়াসে সমগ্র বিশ্বের ১০-১২ কোটি প্রোফাইল হাতড়াইয়া আনন্দিত চিত্তে কালাতিপাত করিতে লাগিলেন। অভিজ্ঞতা শুধু মানুষকেই নয়, ঈশ্বরকে ও সমৃদ্ধ করে। মহেশ্বর লক্ষ্য করিলেন , ফেসবুকে জনপ্রিয় এবং সর্বজন পরিচিত হইবার সহজতম পন্থা হইল, কারণে হউক আর অকারণে হউক, নিজের এবং পরিবারের সকলের রঙ্গীন আলেখ্য ( ফটো ) নিয়মিত প্রকাশ করিয়া নিজেকে জাহির করা। ক্ষেপা মহেশ্বর তৎক্ষণাৎ নন্দি নামক অনুচরকে প্রেরণ করিয়া নারদকে আনয়ন করিলেন এবং সন্মান প্রদর্শন পূর্বক আপন অভিপ্রায় ব্যক্ত করিলেন। দেবর্ষির খুশীর অন্ত নাই, তিনি আনন্দিত, কারণ, দেবের দেব মহাদেব ও মনুষ্য সৃষ্ট ফেসবুকের প্ররোচনায়, যশের কাঙাল হইয়া স্বেচ্ছায় তাহার জালে ধরা দিয়াছেন। অতএব গৃহবিবাদের লগ্ন আসন্ন। মহেশ্বর দেবর্ষি কে সতর্ক করিয়া কহিলেন, "আমি ভিন্ন আর সকলের আলোক চিএ গ্রহণের সময় খেয়াল রাখিবে, যেন তাহারা বুঝিতে না পারেন যে তাহাদের আলোক চিত্র গৃহীত হইয়াছে। আরও খেয়াল রাখিবে, আলোক চিত্র গ্রহণের সময় যেন কাহার ও হস্তে অস্ত্র-শস্ত্র, লীলাকমল, শঙ্খ, চক্র, রত্নসিন্দুক ,বীণা প্রভৃতি দেবচিহ্ন্ বর্তমান না থাকে এবং সঙ্গে যেন কোন বাহন না থাকে। যথা আজ্ঞা বলিয়া দেবর্ষি স্বয়ং জাপান হইতে মহা মূল্যবান ক্যামেরা ও গুপ্ত ক্যামেরা আনয়ন করিয়া আপন কার্যে প্রবৃত্ত হইলেন।
প্রথমে মহেশ্বর ফেসবুকের ওয়ালে আপন চিত্র প্রকাশ করিলেন। মস্তকে সর্প, চন্দ্র বা গঙ্গার চিহ্নমাত্র নাই, গলায় সর্পের কুণ্ডলী নাই, পরণে ব্যাঘ্রচর্ম ও মস্তকে জটা থাকিলেও ললাটের ত্রিনয়ন লুক্কায়িত থাকায় এবং সাথে ত্রিশূল ও ডমরু না থাকায় কাহারও সাধ্য নাই তাহাকে কৈলাসপতি শিব বলিয়া শনাক্ত করেন। বরঞ্চ জটাধারী ,ব্যাঘ্রচর্ম পরিহিত অনিন্দ্য সুন্দর যোগী মুর্তি দেখিয়া দেশ বিদেশের পুরুষ স্ত্রী নির্বিশেষে কয়েক শত ভক্ত মহেশ্বরের ওয়ালে মন্তব্য করিলেন। অনেকে তাহার শিষ্য শিষ্যা হইবার মনোবাসনা ব্যক্ত করিলেন। কতিপয় পুরুষ আসক্ত মহিলা এমনকি ইনবক্স ম্যাসেজে তাহাকে পতি রূপে কামনা করিয়া দীর্ঘ প্রেমপত্র প্রেরণ করিলেন। মহেশ্বর অভিভূত, সামান্য এক আলোকচিত্র প্রকাশ করিয়া মাত্র একদিনে এত ভক্তের সাড়া পাওয়া কি কম কথা? পুরাকালে শিব মাহাত্ম প্রচার কল্পে তাহাকে কতই না হীন পন্থা অবলম্বন করিতে হইয়াছে। দৈব বলে বনের সমস্ত পশুপক্ষী কে লুক্কায়িত রাখিয়া ব্যাধ কে ক্ষুধার্ত থাকিতে বাধ্য করিয়াছেন। নিশাকালে হিংস্র জন্তুর আক্রমণের ভয়ে ব্যাধ সন্মুখেই মায়াবলে সৃষ্ট বিল্ববৃক্ষ দেখিয়া তাহাতে আরোহণ করিলে, নিজে বিল্ববৃক্ষের তলদেশে সারা রাত্রি ঠায় বসিয়া থাকিয়াছেন। শেষ রাত্রে ক্ষুধায় কাতর ব্যাধ রোদন শুরু করিলে, তাহার কয়েক ফোঁটা অশ্রুজল গড়াইয়া শিথিল বৃন্তযুক্ত বিল্বপত্রের উপর পতিত হইয়াছে এবং কাকতালীয় ভাবে সেই বিল্বপত্র তাহার মস্তকে পতিত হইয়াছে। তখন তিনি স্বয়ং ব্যাধকে দর্শন ও বরদানে প্রীত করিয়া আপন পূজার মাহাত্ম প্রচার করিয়াছেন। আর এক্ষণে এই অপূর্ব যন্ত্রের কল্যাণে বিনা পরিশ্রমে একদিনেই এত ভক্তের সাড়া পাইলেন। এমন ধারা সচল থাকিলে অতি অল্পকাল মধ্যেই তিনি বহুবন্দিত হইবেন, সে বিষয়ে কোন সন্দেহ নাই। অতঃপর মহেশ্বর গণেশের আলোক চিত্র প্রকাশ করিলেন। নারদ সতর্কতা অবলম্বন করায় গণেশের মাথায় মুকুট , হস্তে শঙ্খ, চক্র, গদা, পদ্ম না থাকা সত্ত্বেও গজমুণ্ড ও লম্বোদর হেতু সকলেই গণপতি কে শনাক্ত করিলেন।দেশে বিদেশে বসবাসকারী যাবতীয় গুজরাতি, সিন্ধী ও মাড়োয়ারী ব্যবসায়ীগণ "গণপতি বাপ্পা মরিয়া" মন্তব্যে মহেশ্বরের ওয়াল পরিপূর্ণ করিলেন। কতিপয় ব্যবসায়ী গণপতির মস্তকে স্বর্ণ মুকুট ও গাত্রে রত্নালঙ্কারাদি অদর্শনে এমন মন্তব্য ও করিলেন যে আগামী কয়েক মাসের মধ্যে কয়েক কোটি টাকার মোটা দাঁও মারিতে পারিলে অবশ্যই গণপতির নামে স্বর্ণ মুকুট, রত্নালঙ্কার ও কয়েক কুইন্টাল লাড্ডু চড়াইবেন। আপন পুত্রের প্রতি মনুষ্য সমাজের এইরূপ প্রীতি সন্দর্শনে মহেশ্বর আবেগাপ্লুত হইলেন। কার্তিকেয়র আলোক চিত্র প্রকাশ মাত্র চতুর্দিকে সাজো সাজো রবের উদ্ভব হইল। কার্তিকেয়র এমন সুন্দর গ্রীক ভাস্কর্যের মত দিব্য সুন্দর রূপ দর্শনে তাবৎ রমণী কুল প্রেম শরাবদ্ধ হইলেন। বিশ্বের বিভিন্ন প্রান্ত হইতে কয়েক কোটি সুন্দরী যুবতী ইংরাজী, ফ্রেঞ্চ, জার্মানী, রাশিয়ান, পর্তুগীজ, ল্যাটিন, জাপানী, চৈনিক প্রভৃতি বিদেশীয় ভাষায় এবং তামিল, তেলেগু, কন্নর, মালয়ালম, আসামী, বাঙলা , হিন্দী প্রভৃতি ভারতীয় ভাষায় কার্তিক কে প্রেম নিবেদন করিয়া মন্তব্য লিখিলেন এবং সঙ্গে আপনাদিগের আলোকচিত্র প্রেরণ করিলেন। মহেশ্বর স্বগতোক্তি করিলেন: আমার বীর পুত্র কার্তিকেয় দেবতাগণের সেনাপতি, অথচ কোন দেবকন্যা কার্তিকেয় কে প্রণয় নিবেদন করে নাই , তাই সে চিরকুমার রহিয়া গিয়াছে, অথচ মর্ত্যে তাহার কি রূপ জন প্রিয়তা। এই জনপ্রিয়তা অবলম্বনে গণেশের ন্যায় সর্বত্র কার্তিকের পূজার প্রচলন করিতে হইবে। সর্বশেষে মহেশ্বর একযোগে দুর্গা, লক্ষ্মী ও সরস্বতীর আলোক চিত্র প্রকাশ করিলেন। দেবর্ষি নারদ গুপ্ত ক্যামেরায় দেবী দুর্গার যে আলোকচিত্র গ্রহণ করিয়া ছিলেন, তাহাতে বাহন সিংহের ছবি তো ছিলই না, উপরন্তু দুর্গার ত্রি-নয়ন লুক্কায়িত ছিল এবং দেবীর দশটি বাহুর বদলে মাত্র দুইটি বাহু ছিল। কারণ শুধুমাত্র অসুর বিনাশের প্রাক্কালেই দেবীর দশটি বাহুর উদ্ভব হয় এবং তিনি দশ ভুজে দশ প্রহরণ ধারণ করতঃ অসুরদের বিনাশ করেন। লক্ষ্মী এবং সরস্বতীর আলোক চিত্রেও কোন বাহনের ছবি বা বীণা বা ঝাঁপি প্রভৃতি পরিচিত বস্তু ছিল না। দুর্গা ও লক্ষ্মীর তপ্ত কাঞ্চন বর্ণ সদৃশ ভুবনমোহিনী রূপ ও সরস্বতীর সৌধ ধবল শ্বেতপ্রস্তরের ন্যায় অপরূপ রূপ লাবণ্য দর্শনে বিশ্ব ব্যাপী আলোড়নের সৃষ্টি হইল। বিশ্বব্যাপী ফেসবুকের প্রায় সাত কোটি পুরুষ সদস্যের মধ্যে ন্যূনপক্ষে প্রায় পাঁচ কোটি সদস্য মন্তব্যে মন্তব্যে মহেশ্বরের ওয়াল পরিপূর্ণ করিলেন। ফেসবুকে অকস্মাৎ এই জন জোয়ারের প্রভাব দর্শনে ফেসবুকের শেয়ার দর তিন চারি গুন বৃদ্ধি প্রাপ্ত হইল। মন্তব্য পড়িয়া মহেশ্বরের চক্ষু ক্রোধে অগ্নি বর্ণ ধারণ করিল। দুর্বৃত্ত মনুষ্যগণ দুর্গা, লক্ষ্মী ও সরস্বতীকে সুন্দরী রমণী ভ্রমে তাহাদের মনের যাবতীয় লালসা উজার করিয়া মন্তব্য লিখিয়াছেন। এশিয়া, ইউরোপ, আফ্রিকা, অষ্ট্রেলিয়া, উত্তর ও দক্ষিণ আমেরিকা প্রভৃতি সমস্ত মহাদেশের পুরুষ দিগের একই রকম আচরণে শঙ্কর মহাক্রোধে কাঁপিতে লাগিলেন। সরোষে নন্দী ভৃঙ্গি ও ভূতগণকে ডাকাইয়া আদেশ দিলেন, "সকলে প্রস্তুত হও,পৃথিবী পাপে পরিপূর্ণ হইয়াছে, এক্ষণি সমস্ত পাপের বিনাশ সাধন না করিলে সৃষ্টি রসাতলে যাইবে। ফেসবুকে যত লম্পট পুরুষগণের নাম পাইবে, সব লিপিবদ্ধ করো, তৎপর একে একে সকলের প্রাণ সংহার করিবে। আমার ত্রিশূল আনয়ন করো, আমি ত্রিশূল নিক্ষেপ করিয়া ফেসবুকের সংযোগ রক্ষাকারী যাবতীয় কৃত্রিম উপগ্রহ কে এই মুহূর্তে ধ্বংস করিব। আর তোমরা সকলে জননীকে সংবাদ জানাইয়া আইস, এ বৎসরে মর্ত্যভূমে পুত্র কন্যা সহ পিত্রালয়ে ভ্রমণ ও পাপিষ্ঠদের পূজা গ্রহণ আমি নিষিদ্ধ ঘোষণা করিলাম। সকলে মিলিত ভাবে গালবাদ্য ও ডমরু বাজাও, আমি ধ্বংসলীলার প্রস্তুতি স্বরূপ তাণ্ডব নৃত্য শুরু করি।" অনুচরগণ দেবী দুর্গা কে সংবাদ প্রেরণ করিবার পর মহা সমারোহে ববম...বোম....ববম.....বোম শব্দে গালবাদ্য শুরু করিল ও মহা সমারোহে ডমরু বাজাইতে লাগিল। মহেশ্বর নাচের মুদ্রা শুরু করিবা মাত্র পদকম্পনে স্বর্গ, মর্ত্য, পাতাল কাঁপিতে শুরু করিল। প্রবল কম্পনে ও মহা শোরগোলে অন্যান্য দেবতা গণ তথায় উপস্থিত হইলেন। দেবর্ষি নারদ এতক্ষণ অন্তরালে থাকিয়া মজা অনুভব করিতেছিলেন, এক্ষণে সন্মুখে উপস্থিত হইলেন। ইতিমধ্যে পিত্রালয়ে গমন নিষিদ্ধ শুনিয়া মহা ক্রোধে দেবী দুর্গা পুত্র কন্যা সহ তথায় উপস্থিত হইলেন। দেবতা গণ করযোড়ে মহেশ্বর কে কহিলেন,"হে প্রভু সংযত হউন, তাণ্ডব সংবরণ করুন। ক্ষুদ্রমতি নরগণের অন্যায়ের হেতু আমাদের স্বার্থের হানি ঘটান কেন ? আপনি লক্ষ লক্ষ মনুষ্যের প্রাণ সংহার করিলে, আমাদের পূজা কে করিবে ? দেবী দুর্গা মহাক্রোধে ঘূর্ণিত লোচনে কহিলেন, "নাথ, আপনার অনেক অত্যাচার সহ্য করিয়াছি, আপনি দিবা নিশি গাঁজা, ভাঙ সেবন ও কারণ্ বারি পান করিয়া ভূত প্রেতাদি সহ কালাতিপাত করিয়া থাকেন,আমি নীরবে সকল লাঞ্ছনা সহ্য করি। সম্বৎসরে একবার মাত্র পুত্র কন্যা সহ পিত্রালয়ে গমন করি ও ভক্তগণ কর্তৃক পূজা প্রাপ্ত হই। ভক্তগণ সারা বৎসর আমার অপেক্ষায় দিন গণনা করে, আমার পূজাকে উপলক্ষ্য করিয়া মৃতশিল্পী, কুম্ভকার, মালাকার, গন্ধবণিক, মণ্ডপ শিল্পী, চিত্রশিল্পী, সঙ্গীত শিল্পী, আলোক শিল্পী, চর্মকার, তন্তুবায়, বস্ত্র ব্যবসায়ী, ক্ষৌরকার, খলিফা, ঢাকী,পুরোহিত তথা ভিন্ন ভিন্ন বৃত্তিধারীদের প্রচুর অর্থাগম হয়। আমার পূজা বন্ধ হইলে তাহারা সকলে প্রাণে মরিবে। দুঃখের কথা কি বলিব নাথ, আমার পূজাকে উপলক্ষ্য করিয়া বাঙালী কিশোরী, যুবতী ও বিবাহিতা রমণীরা পঞ্চমী হইতে দশমী পর্যন্ত এই ছয় দিনে, দিনে কমপক্ষে তিন বার হিসাবে অন্ততঃ অষ্টাদশ বার কেশ বিন্যাস, নানা মহার্ঘ্য প্রসাধনী সহযোগে রূপচর্চা , ফ্রক, জিনসের প্যান্ট ও শর্ট টপ, মিনি-মিডি স্কার্ট , শাড়ী বা সালোয়ার কামিজে সুসজ্জিতা হইয়া লক্ষ লক্ষ পূজামণ্ডপ আলোকিত করিয়া বসিয়া থাকেন। তাহাদের সৌন্দর্য সুধা পানের উদ্দেশ্যে সদ্য গোঁফের রেখা গজানো কিশোর হইতে ঘাটের মড়া শকুন গলার বৃদ্ধ পর্যন্ত তাবৎ পুরুষ কুল সুসজ্জিত হইয়া তাহাদের পার্শ্বে ঘুরঘুর করিয়া বেড়ায়। আমার পূজা বন্ধ হইলে তাহাদের সকলের মনে দুঃসহ দুঃখানল প্রজ্জ্বলিত হইবে। অতএব নাথ,আপনি সিদ্ধান্ত প্রত্যাহার করিয়া আমাকে পিত্রালয়ে যাইবার অনুমতি প্রদান করুন,আমি যাইবার আয়োজন সমাপ্ত করি। আর যদি অনুরোধ রক্ষা না করেন,তবে আর একবার দেহত্যাগ করিয়া জ্বালা জুড়াই।"
মহাতেজা রমণীর ঘূর্ণিত লোচন কে উপেক্ষা করিবেন ,এমন দৃঢ়চেতা পুরুষ শুধু মনুষ্য কুলেই নয়, দেব কুলেও দুর্লভ। মহেশ্বর আমতা আমতা করিতে লাগিলেন। ইত্যবসরে সুযোগ প্রাপ্ত হইয়া দেবর্ষি নারদ করজোড়ে কহিলেন, প্রভু আমার নিকট ফেসবুকের বৃত্তান্ত সকল শ্রবণ করুন,অচিরাৎ আপনার ভ্রান্ত ধারণা দূরীভুত হইবে। ফেসবুকের এই যে রমরমা, তাহার প্রধান আকর্ষণ ই নারী। যদি ফেসবুকে নারীর প্রবেশাধিকার বন্ধ করা হয়, তবে দেখিবেন সাত কোটি পুরুষ সদস্য হইতে কয়েক মাসে সদস্য সংখ্যা মাত্র কয়েক লক্ষে পরিণত হইবে। কোটি কোটি পুরুষ ও নারীর বিনোদন স্থল এই ফেসবুক। অধিকাংশের ই উদ্যেশ্য দিনভর বিপরীত লিঙের মনুষ্যের সঙ্গে নানা মাধ্যমে চটুল বাক্যালাপ দ্বারা মনের অবদমিত ক্ষুধার নিবারণ করা। এখানে সুন্দরী মহিলাদের কদর সবচেয়ে বেশী। তাহাদের বন্ধু সংখ্যা কাহারও তিন হাজার, কাহারও চার হাজার, কাহারও বা পাঁচ হাজার ছুঁই ছুঁই। তাহাদের অধিকাংশের ই একমাত্র কাজ কয়েক দিন পর পর নিজের নানা ভঙ্গীর আলোক চিত্র দ্বারা প্রোফাইল পিকচার পরিবর্তনের মাধ্যমে আপন সৌন্দর্য জাহির করা তথা একদল ভেড়া মার্কা মুর্খ স্তাবক দল সৃষ্টি করা। ঐ সুন্দরী রমণী যদি একটি বিড়াল ছানার ছবি ও পোষ্ট করেন, তবে তৎক্ষনাৎ শত শত মুগ্ধ স্তাবক মন্তব্য লেখেন, এমন সুন্দর বিড়াল ছানা তাহারা ভূ-ভারতে দেখেন নাই। একদল পুরুষ সদস্যের একমাত্র কাজ, সারাদিন মহিলা সদস্যাদের স্তাবকতা করা , ম্যাসেজ ও চ্যাটিং এর মাধ্যমে মহিলাদের উত্যক্ত করা ও প্রেম নিবেদন করা। মা জননী দুর্গা ও লক্ষ্মী সরস্বতী র আলোক চিত্রে এই শ্রেণীর রুচিহীন ঘৃণ্য সদস্যরাই মন্তব্য প্রেরণ করিয়াছিলেন। আর বিলাসিনী মহিলারাই কার্তিকের আলোক চিত্রে মন্তব্য লিখিয়াছিলেন। ফেসবুকে শত শত কবি ও সাহিত্যিকের ভীড়, শতাধিক কবিতার গ্রুপ, সর্বত্রই গাঁয়ে মানে না আপনি মোড়ল দশা প্রাপ্ত ব্যক্তিতে পরিপূর্ণ। কবিতার নামে সব দুর্বোধ্য লেখার ছড়াছড়ি। লেখক নিজেই জানেন না, কি লিখিয়াছেন। অভিধান হইতে কঠিন কঠিন শব্দ চয়ন করিয়া মৃত অক্ষরের মত সাজাইয়া সব কবিতা রচনা করেন। তাহাতেই তাহাদের আঁতলামির সীমা নাই। আপনি ও প্রভু ভুল করিয়াছেন। দেবীরা ঐশ্বর্যশালীনি,স্বর্ণালঙ্কারাভরণ সুসজ্জিতা,মস্তকে স্বর্ণ মুকুট,হস্তে লীলাকমল ধারিনী ও বাহনে উপবিষ্টা না হইলে কেহ দেবী বলিয়া জ্ঞান করে না, তাই ঐ বিপত্তি ঘটিয়া ছিল। আপনি সমস্ত অবগত হইলেন,এক্ষণে মা জননী কে পিতৃ আলয়ে গমনের অনুমতি প্রদান করুন। আর মা জননীরা যখন মর্ত্যভূমে পূজা গ্রহণ করিবেন, তখন আপনি কৈলাসে বসিয়াই এই ল্যাপটপের সাহায্যে কোথায় কত সমারোহ, কোথায় কেমন মণ্ডপ ও আলোক সজ্জা,সমস্ত দেখিয়া বিশেষ পুলকিত হইবেন। অতঃপর পরমেশ্বর মা দুর্গাকে পিত্রালয়ে গমনের অনুমতি দিলেন ও হাস্যমুখে নারদকে কহিলেন, "বৎস, মা জননীর আগমনী গ্রচার যেমন আবশ্যক, তেমনি , ফেসবুকের এই সব নোংরা মানুষ গুলিকেও সতর্ক করা উচিত, নারী রা দেবী না হইলেও দেবীরই অংশ, কারণ দেবী না হইলে মা হওয়া যায় না। তুমি কোন ফেসবুকের লেখক কে দিয়া এই ঘটনা লিপিবদ্ধ করাইয়া অবিলম্বে ফেসবুকে প্রচারের ব্যবস্থা করো।" নারদ কহিলেন, "প্রভু, হিমালয়ের পাদদেশে শিলিগুড়ি নামক ভূখণ্ডে,এক ধর্মভীরু নিষ্কর্মা ব্যক্তি বাস করেন। তিনি ছোট খাটো কবিতাও লিখিয়া থাকেন।আপনি স্বপ্নে তাহাকে আপনার জানা ঘটনা টুকু দিব্যশক্তি বলে প্রত্যক্ষ করাইয়া আদেশ করিবেন,যেন অবশ্যই ''দেবীর আগমনী সংবাদ '' নামে রম্যরচনা লিখিয়া ফেসবুকে প্রচার করেন। আমিও আপনার পরে পরেই তাহাকে স্বপনে দেখা দিয়া আপনার জানা অংশের পূর্ববর্তী অংশ,এবং আমার মহিমা প্রচারের আদেশ দিব, তবেই আমাদিগের কার্য সিদ্ধি হইবে।

"কার্যাঞ্চাগে নারদ তথা শিবানুমত্যানুসারে লিখিতং ইতি।

******************************
সমর কুমার সরকার / শিলিগুড়ি
******************************

Creative Commons License
রম্য রচনা: দেবীর আগমনী সংবাদ by সমর কুমার সরকার / শিলিগুড়ি is licensed under a Creative Commons Attribution-NonCommercial-NoDerivs 3.0 Unported License.Based on a work at samarkumarsarkar.blogspot.in


[<a rel="license" href="http://creativecommons.org/licenses/by-nc-nd/3.0/deed.en_US"><img alt="Creative Commons License" style="border-width:0" src="http://i.creativecommons.org/l/by-nc-nd/3.0/88x31.png" /></a><br /><span xmlns:dct="http://purl.org/dc/terms/" property="dct:title">রম্য রচনা: দেবীর আগমনী সংবাদ </span> by <a xmlns:cc="http://creativecommons.org/ns#" href="http://www.blogger.com/blogger.g?blogID=1050337976214013732#editor/target=post;postID=2602637294212771993" property="cc:attributionName" rel="cc:attributionURL"> সমর কুমার সরকার / শিলিগুড়ি</a> is licensed under a <a rel="license" href="http://creativecommons.org/licenses/by-nc-nd/3.0/deed.en_US">Creative Commons Attribution-NonCommercial-NoDerivs 3.0 Unported License</a>.<br />Based on a work at <a xmlns:dct="http://purl.org/dc/terms/" href="samarkumarsarkar.blogspot.in" rel="dct:source">samarkumarsarkar.blogspot.in</a>.]