'' বাংলা সাহিত্যের আসর ''

যে সমস্ত লেখক ও লেখিকা ' বাংলা সাহিত্যের আসরে ' তাদের নির্বাচিত লেখা প্রকাশ করতে চান,তারা তাদের লিখিত বিষয় টি Microsoft Words - এ লিখে অথবা Photo Shop -এ চিত্রসহ বিষয়টি প্রস্তুত করে samarkumarsarkar@yahoo.co.in বা samarkumarsarkar@gmail.com -এ E-mail করে পাঠিয়ে দেবেন । সদস্য হবার জন্য ও মন্তব্য লেখার জন্য Google Friend Connect ব্যবহার করুন। ব্লগ টিকে আপনাদের Face Book-এ Share করুন।

Monday, April 30, 2012

তোমার খাতায় মাইনে কত ? - সমর কুমার সরকার / শিলিগুড়ি







তোমার খাতায় মাইনে কত ?

মাঝবয়সী মহিলা এক দুর্দশা কাতর,
কেহ বলে পাগলী তারে,কেহ ভাবে চোর।
নোংরা,ছেঁড়া শাড়ী পরা,পায়ে ছেঁড়া চটি,
হাতে নিয়ে খাতা কলম,চলেছে পথ হাঁটি।
মাঝে মাঝে হাত তুলে কি বলছে মৃদু স্বরে,
শুনতে পেলেও,সে কথা কেউ বুঝতে নাহি পারে।
শুধাই তারে,কি হয়েছে ?বলে ভীষণ রেগে-
'তোমার খাতায় মাইনে কত ? দেখাও দেখি আগে।'

চমকে উঠি,ঠিক কথা তো,মাইনে আমার কত ?
জন্ম থেকে আজ অবধি কাজ করেছি যত।
ছেলে মেয়ের ভরণপোষণ,পালন পরিবার,
সবার কথাই ভেবে গেলাম,না ভেবে 'আমার'।
বিনিময়ে কি পেয়েছি ? কি বা সার্থকতা ?
করিনি তার হিসাব নিকাশ,বানিয়ে হিসাব খাতা।
জানতে হবে,রহস্য কি - ইচ্ছে মনে জাগে,
বলি তারে,'তোমার খাতা দেখাও দেখি আগে।'

বসিয়ে তারে জল খাবারের দোকানের এক পাশে,
খাতা খুলে বলব কি আর দুঃখে মরি হেসে।
পাতায় পাতায়,হেথায় হোথায় চোখ বুলিয়ে দেখি,
নানা স্থানে নানা বিষয়,চিহ্ন আঁকিবুঁকি।
প্রথম পাতায় নাম লেখা-'শ্রী শ্যামা চরণ রায়',
তাহার হিসাব তিরিশ পাতা,দেখেই বোঝা যায়।
বিয়ের পরের তিরিশ বছর তিরিশ পাতায় ধরা,
জমা-খরচ,দেনা-পাওনা, সেই হিসাবে ভরা।

দয়া,মায়া,ভালবাসা,স্নেহ,আদর আদি,
জমার ঘরে লিখে,পাশে আঁকা কলার কাঁদি।
প্রতি পাতার এক ধারেতে ঢ্যারা চিহ্নের সার,
তলায় লেখা,'প্রতিটি দাগ- প্রতি বারের প্রহার'।
কাপড় কাচা,বাসন মাজা,রান্না করার মাসি,
সে সব খরচ প্রতি পাতায় লেখা রাশি রাশি।
সর্বশেষে হিসাব কষা,গণিকালয়ের ব্যয়,
বলি তারে,না বুঝালে বুঝতে পারা দায়।

সজল চোখে মহিলা কয়,''ভাবছ,পাগল আমি ?
আমি পাগল নই কো মোটে,পাগল পশু স্বামী।
দয়া,মায়া,স্নেহ,আদর ছিল না ওর মনে,
পশুবৃত্তি ছাড়া শ্যামা আর কিছু না জানে।
তিরিশ বছর ওনার ঘরে বেশ্যাগিরির পরে,
যৌবনেতে ভাঁটা দেখে,দিলো যে দূর ক'রে।
ব্যর্থ আমার জীবন বাবু,বিচার কি এর নাই ?
লিখেছি তাই হিসাব খাতায়,পাওনা টাকা চাই।''

প্রতি মাসে ভাত-কাপড়ে হাজার টাকা ধরে,
তিন লক্ষ ষাট হাজার ব্যয় তিরিশ টি বছরে।
দেনা বাবদ আমার নামে দেখুন আছে লেখা,
দয়া,মায়া কাঁচকলা ওর,তাই তো কলা আঁকা।
কাপড় কাচা,বাসন মাজায় তিনশো ধরে মাসে,
এক লক্ষ আট হাজার তো হিসাব মতই আসে।
রান্না করার মাসির বেতন চারশো মাসে হলে,
এক লক্ষ চুয়াল্লিশ হাজার হিসাবেতে মেলে।

গণিকালয়ে দিন-রাত্রি মোট একশো ধরে,
দশ লক্ষ আশি হাজার পাওনা এ সংসারে।
তের লক্ষ বত্রিশ হাজার পাওনা আমার লেখো,
দেনা বাবদ দেয় টাকা,বিয়োগ ক'রে দেখো-
নয় লক্ষ বাহাত্তর হাজার ঠকিয়েছে মোরে,
পতি সাজার সুযোগ পেয়ে,প্রতারণা ক'রে।
সম্পর্ক টা চুকে গেছে,নয় তো সে আর পতি,
তবে কেন মেনে নেব,এমন বিরাট ক্ষতি ?

দ্বারে দ্বারে ভিক্ষা ক'রে চলে না তো আর,
পাগল বলে ঢিল ছোঁড়ে সব,চালায় অত্যাচার।
এক পশুতে ছেড়ে দেওয়ায়,হাজার পশু ঘোরে,
ইচ্ছে ক'রে পাগল সাজা,ভয় যেন পায় মোরে।
হিসাব খাতা নাও গো বাবু,করো প্রতিকার,
নারীর প্রতি না হয় যেন এমন অবিচার।''
শুনে তাহার সকল ব্যথা,চোখের জলে ভাসি,
পুরুষ জাতির প্রতিনিধি আমি ও সমান দোষী।

ভেবে দেখি,সব পুরুষ ই 'শ্যামা চরণ রায়',
সামান্য তার হের ফেরে তে কি বা আসে যায় ?
নিজের বেলায় হিসাব কষে পূর্ণ ষোলো আনা,
নারী,-সে তো শাস্ত্রমতে বিনা পয়সায় কেনা।
দেহের মোহেই প্রেম-পিরিতি,দেহই ভালবাসা,
দেহই তাদের রঙিন স্বপন,দেহই তাদের নেশা।
চায় নারী কে আপন ক'রে,চায় শুধু তার মন,
এমন পুরুষ পৃথিবীতে আছে বা কয় জন ?

পুরুষ জাতির দম্ভ যাহা,নারীর অপমান,
নারী জাতির বলিদানে,পুরুষ বলীয়ান।
কাপড় কাচা,বাসন মাজা,রান্না,শিশু পালন,
পতির সেবায় জীবন পাত আর পতির সাথে শয়ন।
ঘরে ঘরে নারীর মনে প্রশ্ন যদি জাগে-
'আমার খাতায় মাইনে কত ?হিসাব দেখি আগে।'
বলুন তো সব শ্যামা চরণ,কি দেবেন উত্তর ?
মুখোশ তো আজ খুলে গেছে,তাই কি নিরুত্তর ?


****************************************
সমর কুমার সরকার / শিলিগুড়ি 
****************************************
Creative Commons License
তোমার খাতায় মাইনে কত ? by সমর কুমার সরকার / শিলিগুড়ি is licensed under a Creative Commons Attribution 3.0 Unported License.
Based on a work at samarkumarsarkar.blogspot.in


[<a rel="license" href="http://creativecommons.org/licenses/by/3.0/"><img alt="Creative Commons License" style="border-width:0" src="http://i.creativecommons.org/l/by/3.0/88x31.png" /></a><br /><span xmlns:dct="http://purl.org/dc/terms/" href="http://purl.org/dc/dcmitype/Text" property="dct:title" rel="dct:type">তোমার খাতায় মাইনে কত ?</span> by <a xmlns:cc="http://creativecommons.org/ns#" href="http://www.blogger.com/blogger.g?blogID=1050337976214013732#editor/target=post;postID=2770154639944704450" property="cc:attributionName" rel="cc:attributionURL">সমর কুমার সরকার / শিলিগুড়ি</a> is licensed under a <a rel="license" href="http://creativecommons.org/licenses/by/3.0/">Creative Commons Attribution 3.0 Unported License</a>.<br />Based on a work at <a xmlns:dct="http://purl.org/dc/terms/" href="samarkumarsarkar.blogspot.in" rel="dct:source">samarkumarsarkar.blogspot.in</a>.]

Friday, April 27, 2012

জাগুন দাদা,জাগুন ! - সমর কুমার সরকার / শিলিগুড়ি



জাগুন দাদা,জাগুন !

জাগুন দাদা, জাগুন !
আয়েস ক'রে জাগতে গিয়ে -
গরম চা-য়ে চুমুক দিয়ে,
প্রিয়ার ঠোঁটে চুমু খেয়ে
চোখটি বুজে থাকুন।
ছাই দেবেন কার বাড়া ভাতে,
ভেবে নিন এই সু-প্রভাতে,
ফন্দি এঁটে হাস্য মুখে
সুখের ঢেঁকুর তুলুন।
জাগুন দাদা,পরের তরে জাগুন !

লাগুন দাদা,লাগুন !
সংবাদপত্র,সমাচারে,
যেথায় যত জ্ঞান বিতরে,
গরুর মত গো-গ্রাসেতে
যত পারেন গিলুন।
কার কতটা বাড় বেড়েছে,
কে কার ধানে মই দিয়েছে,
কার ছিদ্র কত বড়
সে সব আগে মাপুন।
লাগুন দাদা,পরের পিছে লাগুন !

ফাগুন দাদা,ফাগুন !
চার দিকেতে নজর কাড়া
স্বল্পবাসে সুন্দরীরা,
মনকে করে পাগল পারা,
মাথায় চাপে খুন। 
মাতৃসদন,হাসপাতালে,
জন্মে জাতক দলে দলে,
আর কিছু কাজ না পারিলে-
বংশ বৃদ্ধি করুন।
ফাগুন দাদা,মন মাতানো ফাগুন !

ভাগুন দাদা,ভাগুন !
পরের বিপদ,পরের দুঃখে,
এগিয়ে গিয়ে হাস্য মুখে,
মিষ্টি মধুর বচন দিয়ে
সুযোগ বুঝে কাটুন।
পরের তরে সময় ব্যয়ে
নাই প্রয়োজন,তাহার চেয়ে
নিজের কিসে ফয়দা হবে
সেই কথা টা ভাবুন।
ভাগুন দাদা,জ্ঞান টি দিয়ে ভাগুন !

আগুন দাদা,আগুন !
রুদ্ধ মনে বদ্ধ তালা,
ব্যর্থ প্রেমের কাঁটার মালা,
পরের সুখে চক্ষু জ্বালা
ধরায় বুকে আগুন।
অবিশ্বাসের বাষ্প দিয়ে
পরের হৃদয় দিন বিষিয়ে,
পরের ঘরে আগুন জ্বেলে
নয়ন ভরে দেখুন।
নিভান দাদা,নিজের মনের আগুন !

রাগুন দাদা,রাগুন !
আইন বিধির ফাঁক-ফোঁকরে
দুর্নীতি আর অনাচারে,
দেশ টি যখন গেছে ভরে
ঘৃণায় মুখ টি ঢাকুন।
সারা জীবন হেসে খেলে,
বৃথা সময় গেল চলে,
মানুষ প্রমাণ করতে হ'লে
এক বার তো রাগে জ্বলে উঠুন।
রাগুন দাদা,মানুষ হয়ে জাগুন !

******************************
সমর কুমার সরকার / শিলিগুড়ি 
*******************************
Creative Commons License
জাগুন দাদা,জাগুন ! by সমর কুমার সরকার / শিলিগুড়ি is licensed under a Creative Commons Attribution 3.0 Unported License.
Based on a work at samarkumarsarkar.blogspot.in

[<a rel="license" href="http://creativecommons.org/licenses/by/3.0/"><img alt="Creative Commons License" style="border-width:0" src="http://i.creativecommons.org/l/by/3.0/88x31.png" /></a><br /><span xmlns:dct="http://purl.org/dc/terms/" href="http://purl.org/dc/dcmitype/Text" property="dct:title" rel="dct:type">জাগুন দাদা,জাগুন !</span> by <a xmlns:cc="http://creativecommons.org/ns#" href="http://www.blogger.com/blogger.g?blogID=1050337976214013732#editor/target=post;postID=7245478186142255846" property="cc:attributionName" rel="cc:attributionURL">সমর কুমার সরকার / শিলিগুড়ি</a> is licensed under a <a rel="license" href="http://creativecommons.org/licenses/by/3.0/">Creative Commons Attribution 3.0 Unported License</a>.<br />Based on a work at <a xmlns:dct="http://purl.org/dc/terms/" href="samarkumarsarkar.blogspot.in" rel="dct:source">samarkumarsarkar.blogspot.in</a>.]

Tuesday, April 24, 2012

দীক্ষাগুরু - সমর কুমার সরকার / শিলিগুড়ি



দীক্ষাগুরু

ছোট শিশু সনাতন,বড় কুতুহলী মন,
সবে পড়ে প্রাথমিক স্কুলে,
তর্কে বেজায় দড়,মানে না সে ছোট বড়,
নয় মোটে দমিবার ছেলে।
ভূগোলের ক্লাস ছিল,শিক্ষক পড়াইল-
'আমাদের পৃথিবী টা গোল',
মনে ভাবে সনাতন,মাস্টার এ কি কন ?
মাথা তার নয় তো পাগল ?
সারা দিন হেঁটে যাই,কোন সন্দেহ নাই,
পৃথিবী কে সমান-ই তো দেখি,
বাড়ী ফিরে মা-কে বলে,''মাস্টার ইস্কুলে
ভূগোল শিখাতে দিল ফাঁকি।''
মা য়ে বলে-''তোর বাবা,রাজনীতি,জনসেবা-
এই সব কাজে দেশ ঘোরে,
গাঁয়ের মাতব্বর,সব কিছু জানা তার,
সব কিছু খুলে বল তারে।''

সনাতন গিয়ে কাছে,বলে-''বাবা,কথা আছে,
পৃথিবী টা গোল না সমান ?
ভাল করে ভেবে বলো,পৃথিবী যে গোল হ'লো,
কি বা তার আছে গো প্রমাণ?''
বাবা বলে-''এক কালে,পড়িয়াছি পাঠশালে,
নামতা ও বর্ণ-পরিচয়,
অ-আ,ক-খ,আঁক কষা,কড়া,ক্রান্তি,তিল,মাষা-
এর বেশী আর কিছু নয়।
সাধারণ জ্ঞানে বলে,পৃথিবী টা গোল হ'লে
জমি-জমা দেখিতাম গোল,
যাব তোর ইস্কুলে,মাস্টার দেখি কি বলে,
কেমন সে বুঝায় ভূগোল।''
পিতা-পুত্র দু'য়ে মিলে,পর দিন ইস্কুলে
ভূগোলের শিক্ষকে ধরে,
বলে-''আছে সন্দেহ,আমরা বুঝিনি কেহ,
পৃথিবী টা গোল কি প্রকারে ?''

ভূগোলের শিক্ষক,বিস্ময়ে হতবাক,
মনে মনে গোনে যে প্রমাদ,
গ্রামের মাতব্বর,প্রবল ক্ষমতাধর,
না বুঝিলে ঘটিবে বিবাদ।
টেবিলে কাগজ রেখে,নানা রূপ ছবি এঁকে
বলে-''এই দেখুন এ খানে-
সাগরেতে দিয়ে পাড়ি,একই দিকে মুখ ক'রি
যান যদি কোন জলযানে,
বহু দিন পার ক'রে,আসিবেন সেথা ফিরে,
যাত্রা শুরু যেথা হয়েছিল,
পৃথিবী টা গোল তাই,এই রূপ ফল পাই,
বিষয় টি প্রমাণিত হ'লো।''
পিতা কয়-''মানিব না,জলযানে চড়িব না,
জানো তুমি,যাব না সাগরে,
সহজ প্রমাণ দাও,আশেপাশে যাহা পাও,
সত্য ব'লে যাহা মনে ধরে।''

সকলেরে মাঠে নিয়ে,শিক্ষক বলে ভয়ে-
''দেখুন না ওই দূর দিশে,
ছুঁতে ওই বনভূমি,আকাশ এসেছে নামি,
উভয়েতে গেছে মিলে মিশে।
দূর থেকে মনে হয়,আকাশেরে ছোঁয়া যায়,
কারণ কি জানা আছে কিছু ?
পৃথিবী-বক্রতলে,উভয়েতে আছে ব'লে,
আকাশ কে মনে হয় নীচু।
যত দূর দেখা চলে,পৃথিবী না গোল হ'লে
দূর-আকাশ থাকিত উপরে,
বুঝেছেন এই বার ? হয়েছে পরিষ্কার ?
আমি ফিরে যাই ক্লাস ঘরে।''
পিতা কয়-''কাঁচকলা,আকাশ টা সাদা-নীলা
বনের পিছনে দেখি তাই,
ওই রূপ মনে হয়,এ ছাড়া কিছু তো নয়,
হাতে-নাতে প্রমাণ টা চাই।''

শিক্ষক গ্লোব এনে,ঘুরাইয়া সযতনে,
বলে-''এই দেখুন তাকিয়ে-
পৃথিবী টা গোলাকার,হেলানো অক্ষ তার,
এই ভাবে ঘোরে পাক দিয়ে।
আহ্নিক গতি ফলে,দিন রাত হ'য়ে চলে,
একই স্থানে যুগ যুগ ধরে,
পৃথিবী টা গোল ব'লে,এই রূপ ঘটে চলে,
প্রমাণ তো পেলেন এ বারে ?''
পিতা কয় ঘাড় নেড়ে-''পৃথিবী টা যদি ঘোরে,
আমরা কি ভাবে থাকি স্থির ?
ঘুরিতাম সাথে মোরা,ছাই জানো লেখা-পড়া,
মুখে মারো উজির-নাজির।
আমারে পেয়েছ বোকা ? আমি বুঝি কচি খোকা ?
মহাজ্ঞানী ভাবো কি নিজেরে ?
যাহা নিজে বুঝি আমি,তাহা সব চেয়ে দামী,
না বুঝিলে,বোঝাবে আমারে ?''

বাড়ী ফিরে রোষ ভরে,পিতা কয় পুত্রে রে,
''যাবি না কো আর ইস্কুলে,
বাঙলা পড়িতে পারা,নিজ নাম সই করা,
এতে তোর কাজ যাবে চলে।
মাস্টার মহাশয়,চাকুরি করিয়া খায়,
মাসহারা কত পায় শুনি ?
শত বিঘা চাষ জমি,তাহার মালিক আমি,
শস্য বেচে লাখো টাকা গুনি।
জনসেবা,রাজনীতি,বাড়ায়েছে সঙ্গতি,
আমার ক্ষমতা কত আজ !
শিক্ষিত হ'লে পরে,ঘুরিতাম দ্বারে দ্বারে,
পেটে ক্ষুধা,মুখে নিয়ে লাজ।
আজ থেকে হোক শুরু,আমি হ'লে দীক্ষাগুরু, 
পথে ঘাটে পাবি নমস্কার,
পৃথিবী টা গোল হোক,কিংবা সমান হোক,
তাতে তোর কি বা দরকার ?''

*************************************
 সমর কুমার সরকার / শিলিগুড়ি 
*************************************
Creative Commons License
দীক্ষাগুরু by সমর কুমার সরকার / শিলিগুড়ি is licensed under a Creative Commons Attribution 3.0 Unported License.
Based on a work at samarkumarsarkar.blogspot.in


[<a rel="license" href="http://creativecommons.org/licenses/by/3.0/"><img alt="Creative Commons License" style="border-width:0" src="http://i.creativecommons.org/l/by/3.0/88x31.png" /></a><br /><span xmlns:dct="http://purl.org/dc/terms/" href="http://purl.org/dc/dcmitype/Text" property="dct:title" rel="dct:type">দীক্ষাগুরু</span> by <a xmlns:cc="http://creativecommons.org/ns#" href="http://www.blogger.com/blogger.g?blogID=1050337976214013732#editor/target=post;postID=3923139688489344656" property="cc:attributionName" rel="cc:attributionURL">সমর কুমার সরকার / শিলিগুড়ি</a> is licensed under a <a rel="license" href="http://creativecommons.org/licenses/by/3.0/">Creative Commons Attribution 3.0 Unported License</a>.<br />Based on a work at <a xmlns:dct="http://purl.org/dc/terms/" href="samarkumarsarkar.blogspot.in" rel="dct:source">samarkumarsarkar.blogspot.in</a>.]

Friday, April 20, 2012

রূপকথা নয় চুপকথা - সমর কুমার সরকার / শিলিগুড়ি



রূপকথা নয় চুপকথা


'সমীরণ ঘোষ রায়',আগে আগে হেঁটে যায়,
হাতে তার বাজারের থলে,
বালক শ্যালক তার,'হরিময় সরকার',
তাল রেখে পিছে পিছে চলে।
দু'জনে চলেছে হাটে,সময় নেই কো মোটে,
যেতে হবে দু মাইল টানা,
হরিময় মনে ভাবে,কতই না মজা হবে,
আজ রাতে হবে জোর খানা।
জামাইবাবুর বাড়ি,খেতে হবে পেট ভরি,
পোলাও রাঁধিলে হয় খাসা,
পাঁঠার মাংস হ'লে,খাবে আজ হাত খুলে,
মাংস টা যদি হয় কষা।
শেষ পাতে সন্দেশ,দিলে পরে হয় বেশ,
তৃপ্তি তা হ'লে ষোল আনা,
দিদির বিয়ের পরে,এসেছে তাহার ঘরে,
তাই মনে এত কল্পনা।

হাটে গিয়ে সমীরণ,বসে থাকে কিছুক্ষণ,
তার পরে যায় ভাঁটিখানা,
একটি পাঁইট কিনে,মন হয় চনমনে,
সাথে কেনে তেলেভাজা,চানা।
দোকানের এক ধারে,সাজানো যতন ক'রে
জলের পাত্র আর গ্লাস,
গ্লাসে ঢেলে ধীরে ধীরে,পাঁইট সাবাড় ক'রে
মনে তার বাড়ে উল্লাস।
হরিময় পাশে বসে,মনে মনে রাগে ফোঁসে,
বেলা শেষ, নামিছে আঁধার,
বাজার সারিবে কবে ? তারপরে যেতে হবে,
হেঁটে হেঁটে বাড়িতে আবার।
সমীরণ উঠে পড়ে,টলমল পদভরে,
হেলে দুলে হাঁটে থলে হাতে,
হরিময় পিছে যায়,মনে আশা ফিরে পায়,
'মাংস খাইবে আজ রাতে'।

হাটের একটি ধারে,মেছুয়ারা সারে সারে
বসিয়াছে কুচো মাছ নিয়া,
চুনো-পুঁটি,ট্যাংরা,মৌরলা,খয়রা,
চারা পোনা,বাটা,তেলাপিয়া।
সমীরণ দর জেনে,আধা কিলো পুঁটি কিনে,
টলে টলে যায় চাল-হাটে,
লাল লাল মোটা চাল,নাম যার ঢেঁকিশাল,
দুই কিলো তাই কেনে মোটে।
মসুরের ডাল কিনে,আনাজের দাম শুনে
সমীরণ রাগে খালি-খালি,
পালং,বেগুন,মুলা,কুমড়া ও কাঁচকলা
কেনে আর মুখে দেয় গালি।
গৃহ পানে ফিরে চলে,কসাই হাঁকিয়া বলে-
'কচি পাঁঠা নিয়ে যান দাদা',
সমীরণ রেগে কয়,-''কোথা গেলি হরিময়,
তাড়াতাড়ি ফিরে চল হাঁদা''।

রাত্রিতে একসাথে,সবাই বসেছে খেতে,
মোটা ভাত,মসুরের ডাল,
কাঁচকলা তরকারি,শাক,মুলা-চচ্চড়ি,
চুনো-পুঁটি দিয়ে রাঁধা ঝাল।
হরিময় মুখভার,মনে বড় ক্ষোভ তার,
খেতে খেতে অভিমানে বলে-
''কেমন জামাইবাবু,খরচ করিতে কাবু,
এত কৃপণ দেখিনি কোন কালে।
হাটে গিয়ে নেশা ক'রে,কিছু খাওয়ালে না মোরে,
বিকাল কাটিল ক্ষুধা পেটে,
হাটে তে মাংস পেলে,মোর কথা ভুলে গেলে,
মাংস কিনিলে না তুমি মোটে।
বাড়িতে এসেছে শালা,খাওয়ালে কাঁচকলা,
ডাল, ভাত আর চুনো-পুঁটি,
শুধালে বাড়িতে গেলে,সব যদি বলি খুলে,
হেসে সবে খাবে লুটোপুটি।''

'শোন্ শ্বশুরের পুত,হাভাতে,গাঁয়ের ভূত'-
সমীরণ বলে রেগে গিয়ে,
''মনে বড় পরিতাপ,তোর ওই বুড়ো বাপ,
মেয়ে তার দিয়েছে গছিয়ে।
ও পাড়ার 'রঘু দুলে',পড়ে নি কো ইস্কুলে,
শ্বশুরেতে দিলো ভটভটি,
আমি তো 'এইট পাশ',নিজ জমি ক'রি চাষ,
মোর বেলা কেন ফুটো-ঘটি ?
নাই তার আক্কেল,দিলো না কো সাইকেল,
খাট,আলমারি,থালা-বাটি,
খালি করে বাহাদুরি,মেয়ে ভারি সুন্দরী !
সুন্দরী খাব আমি চাটি ?
আমাকে ঠকালো যারা,আত্মীয় নয় তারা,
পাবে না কো ভাল ব্যবহার,
ঠগেরা আসিলে ঘরে,ফিরে যাবে অনাদরে,
দোষ কিছু হবে না আমার।''

অতি ঘোর অপমানে,বড় ব্যথা পেয়ে মনে,
খাওয়া ছেড়ে ওঠে হরিময়।
দিদি কহে সস্নেহে,- ''আসবি না এই গৃহে ,
ঠগ নামে দিয়ে পরিচয়।
লোভে তে কুটিল যারা,মানুষ নয় কো তারা,
বোঝে না কো মানুষের মন,
নিজেরা জ্বলিয়া মরে,অপরে জ্বালায়ে মারে,
নষ্ট যে ও দের জীবন।
কাল ফিরে গিয়ে বাড়ি,বাবাকে বলিস হরি,
জামাই কে করে যেন ঘৃণা,
আমার সুখের তরে,যদি সব দেয় তারে,
তবে আর লাজে বাঁচিব না।
আমাকে পড়িলে মনে,খুঁজে পাবি সব খানে,
বাঙলার ঘরে ঘরে আমি,
যে মেয়েরা পুড়ে মরে,জানিস তাহার ঘরে,
আছে এক লোভাতুর স্বামী।''


********************************
সমর কুমার সরকার / শিলিগুড়ি
********************************

Creative Commons License
রূপকথা নয় চুপকথা by সমর কুমার সরকার / শিলিগুড়ি is licensed under a Creative Commons Attribution 3.0 Unported License.
Based on a work at samarkumarsarkar.blogspot.in


[<a rel="license" href="http://creativecommons.org/licenses/by/3.0/"><img alt="Creative Commons License" style="border-width:0" src="http://i.creativecommons.org/l/by/3.0/88x31.png" /></a><br /><span xmlns:dct="http://purl.org/dc/terms/" href="http://purl.org/dc/dcmitype/Text" property="dct:title" rel="dct:type">রূপকথা নয় চুপকথা</span> by <a xmlns:cc="http://creativecommons.org/ns#" href="http://www.blogger.com/blogger.g?blogID=1050337976214013732#editor/target=post;postID=5374623209428938078" property="cc:attributionName" rel="cc:attributionURL">সমর কুমার সরকার / শিলিগুড়ি</a> is licensed under a <a rel="license" href="http://creativecommons.org/licenses/by/3.0/">Creative Commons Attribution 3.0 Unported License</a>.<br />Based on a work at <a xmlns:dct="http://purl.org/dc/terms/" href="samarkumarsarkar.blogspot.in" rel="dct:source">samarkumarsarkar.blogspot.in</a>.]

Monday, April 16, 2012

নারী ও সমাজ সৃষ্টির রহস্য - সমর কুমার সরকার / শিলিগুড়ি





নারী ও সমাজ সৃষ্টির রহস্য

ব্রহ্মাণ্ড রচিয়া বিধি ভাবি অনন্তর,
সৃজিলেন প্রথমেতে শুধু মাত্র নর।
নানা রূপে,নানা মাপে,নানা ছাঁদে গড়ি,
মস্তকে দিলেন কেশ,মুখে গোঁফ-দাড়ি।
কেহ শ্বেত,কেহ পীত,কেহ বা লোহিত,
কেহ শ্যাম,কেহ কৃষ্ণ বর্ণেতে রঞ্জিত।
আদেশ দিলেন-'সবে যাও ধরাতলে,
জীবন কাটাও সেথা নিজ বুদ্ধি বলে।'

ধরা তলে নরগণ রহে মনমরা,
আঁধার জগতে নাই কিছু মনোহরা।
গড়েছেন বিধি তাই বেঁচে থাকা খালি,
অকারণে মারামারি আর চুলোচুলি।
হতাশ হইয়া বিধি চিন্তে নিরন্তর,
কোন উপচারে ধরা হবে মনোহর।
যাহা দেখি নর গণে পুলকিত হবে,
মোহিত হইয়া সবে সুখেতে বাঁচিবে।

ভাবিয়া চিন্তিয়া বিধি সৃজিল তপন,
আলোকে ভরিল তায় আধেক ভুবন।
এক স্থানে দিন যদি অন্য স্থানে রাত।
সময় ভেদেতে হয় তাপের তফাত।
খর তাপে ক্লান্ত নর তৃপ্তি নাহি পায়,
তৃষ্ণায় কাতর সবে প্রাণ বুঝি যায় !
তপন বিদায় নিলে সায়ং কালেতে,
আঁধার নামিয়া আসে ফের ধরণী তে।

এবারে সতর্ক বিধি রচে সুধাকর,
জ্যোৎস্নালোকে শোভাময় বিশ্ব চরাচর।
রচনা কৌশলে পুনঃ হয় বড় ভুল,
চন্দ্রালোক নাহি রহে নিত্য সমতুল।
ক্রমান্বয়ে পক্ষ কালে কমে-বাড়ে কলা,
কখনও মলিন শশী,কখনও উজালা।
আধেক ভুবনে শশী আকাশেতে ভাসে।
বাকি অর্ধে লুপ্ত রহে রবির প্রকাশে।

পরখি দেখেন বিধি,নর গণ দুঃখী,
ছায়া,জল,খাদ্য পেলে হ'তে পারে সুখী।
তাই বিধি রচিলেন নদী,গিরি,বন,
শস্যক্ষেত্র,ফুল-ফল,শীতল পবন।
স্থল-জল-উভচর পশু পক্ষী যত,
সৃজিলেন পুং রূপে নিজ জ্ঞান মত।
ছায়া,জল,খাদ্য পেয়ে তৃপ্ত যত নর,
পানাহারে কাটে দিন নিদ্রা রাতভর।

নরের আচারে বিধি ভাবে নিজ মনে-
'কোন পাপে রচিয়াছি মূর্খ নর গণে।
সারাটি জীবন যদি সৃষ্টি ক'রে মরি, 
দেবতা হওয়ার সুখ কবে ভোগ ক'রি ?
এমন জীবেরে চাহি পাঠাতে ধরা তে,
নরগণ জন্ম নেবে সেই দেহ হ'তে।
সৃজন পালন দুই-ই হবে সেই দেহে,
নর গণ সদা মুগ্ধ হবে তার মোহে।'

নিদ্রিত নয়নে বিধি দেখেন স্বপন,
স্বপনেতে নারী মূর্তি হয় আগমন।
চমকি বলেন বিধি,'পেয়েছি এ বারে,
সৃজন করিব নারী জগৎ মাঝারে।
পুরুষ হইতে কিছু ভিন্ রূপ দিলে,
মহা কামনার ধন নারী রত্ন মেলে।
নারী হবে সৃষ্টি-স্থিতি-লয়ের আধার
নারী কে বাঁধিতে নর গড়িবে সংসার।'

বিধি সৃজিলেন নারী পরম যতনে,
নর যত আছে তার কম পরিমাণে।
নারী কে পাবার মোহে পড়ে গেল সাড়া,
যেথা যত নর আছে দিল গায়ে ঝাড়া।
শুরু হ'লো রেষারেষি,হানাহানি যত,
সকলে নারীরে তোষে নিজ সাধ্য মত।
চেতনা বিহীন মনে বুদ্ধি বাড়ে ক্রমে,
বিক্রম দেখাতে নর নামে সংগ্রামে।

কেহ আনে ফুল তুলে,কেহ আনে ফল,
কেহ আনে দূর হ'তে স্বাদু মিষ্ট জল।
কেহ আনে শস্য কেটে,কেহ ধরে মাছ,
কেহ কিছু নাহি পেয়ে কেটে আনে গাছ।
কেহ গড়ে মৃৎ পাত্র,দিতে উপহার,
কেহ নাচে-গায়,কেহ গড়ে অলঙ্কার।
কেহ আনে পশু পক্ষী করিয়া শিকার,
এই ভাবে গড়ে ওঠে বৃত্তি সবাকার।

নারীরে রাখিতে হবে সুরক্ষিত স্থানে,
গাছপালা কেটে গৃহ গড়ে নর গণে।
আপন নারীতে পাছে দৃষ্টি দেয় কেহ,
পোষাক বানায়ে নর ঢাকে তার দেহ।
পুত্র কন্যা জন্ম নেয় প্রতি ঘরে ঘরে,
সৃষ্টি কর্তা নর নারী আহ্লাদেতে মরে।
সদা ব্যস্ত রহে নর বাড়ে শুধু কাজ,
এই ভাবে গড়ে ওঠে সুসভ্য সমাজ।

নারীর সাথেতে বিধি রচে স্ত্রী প্রাণী,
স্থল-জল-উভচর বাড়ে যে আপনি।
অন্তরালে বলে বিধি রহি অগোচর-
'এত দিনে পাইলাম পূর্ণ অবসর।
জৈবিক নিয়মে সৃষ্টি আপনি ঘটিবে,
ধরণীতে জীব কুল ক্রমে বেড়ে যাবে।
মাঝে মাঝে কিছু জীব ক'রি সংহার,
রাখিব বজায় ধর্ম,নিজ দায়ভার।'

নারীর শক্তি দেখো জগৎ মাঝেতে,
নরগণ সদা মুগ্ধ নারীর রূপেতে।
শ্বেত,পীত,কৃষ্ণ বর্ণে নাহি বাছাবাছি,
নারী কে পাইতে চাহে সদা কাছাকাছি।
নারীর মোহেতে করে সুখে সংসার,
নারীর বিরহে দেখে চোখে অন্ধকার।
ভাগ্যে বিধি নারী রূপ স্বপ্নে দেখেছিল,
মহৎ সৃষ্টি তার রক্ষা পেয়ে গেলো।

********************************
সমর কুমার সরকার / শিলিগুড়ি 
********************************
Creative Commons License
নারী ও সমাজ সৃষ্টির রহস্য by সমর কুমার সরকার / শিলিগুড়ি is licensed under a Creative Commons Attribution 3.0 Unported License.
Based on a work at samarkumarsarkar.blogspot.in

[<a rel="license" href="http://creativecommons.org/licenses/by/3.0/"><img alt="Creative Commons License" style="border-width:0" src="http://i.creativecommons.org/l/by/3.0/88x31.png" /></a><br /><span xmlns:dct="http://purl.org/dc/terms/" href="http://purl.org/dc/dcmitype/Text" property="dct:title" rel="dct:type">নারী ও সমাজ সৃষ্টির রহস্য</span> by <a xmlns:cc="http://creativecommons.org/ns#" href="http://www.blogger.com/blogger.g?blogID=1050337976214013732#editor/target=post;postID=734327193456543096" property="cc:attributionName" rel="cc:attributionURL">সমর কুমার সরকার / শিলিগুড়ি</a> is licensed under a <a rel="license" href="http://creativecommons.org/licenses/by/3.0/">Creative Commons Attribution 3.0 Unported License</a>.<br />Based on a work at <a xmlns:dct="http://purl.org/dc/terms/" href="samarkumarsarkar.blogspot.in" rel="dct:source">samarkumarsarkar.blogspot.in</a>.]

Saturday, April 14, 2012

বিলম্বিত বসন্ত - সমর কুমার সরকার / শিলিগুড়ি


বিলম্বিত বসন্ত

মাঠে-ঘাটে,রেস্তোঁরাতে প্রায়ই লক্ষ্য ক'রি-
প্রেম করে সব খোলামেলা,ভাষা 'তুই-তোকারি'।
অন্তরঙ্গ ভাবটি দেখে,ভাবনা মনে জাগে,
প্রেম-পিরিতি ক'রলে পরেও,বন্ধু এরা আগে।
বাসনা হয়,গৃহিণী কে বন্ধু রূপে পেলে,
সংসার টা মধুর হবে,কাটবে হেসে খেলে।
ফন্দি আঁটি,কেমন ক'রে গৃহিণী কে মানাই,
'তুই-তোকারি' ভাষা দিয়ে প্রেমটি ক'রি ঝালাই।

বসন্তের এক সাঁঝ বেলাতে,জড়িয়ে ধরে গলা,
গৃহিণী কে বলি,"ও রে চাঁদবদনী নীলা,
তুই যে আমার পরাণ-পাখী,মুক্ত ক'রে খাঁচা,
আয় বুকে তুই টুনটুনি রে,পরাণ টা কে বাঁচা।
তুই যে আমার নয়নতারা,গলার মুক্তো মালা,
আয়,দু'জনে জমিয়ে ক'রি,আজব প্রেমের লীলা।
চল আমরা বসি গিয়ে,পার্কে নিরালাতে,
ঘন্টা কয়েক কাটিয়ে আসি,হাত টি রেখে হাতে।"

ভীষণ ক্রোধে গৃহিণী কন,"ধ'রেছে ভীমরতি ?
লজ্জ্বা শরম ত্যাগ ক'রেছো,কেন এ দুর্মতি ?
লাজে মরি,'তুই-তোকারি' গিন্নী কে কেউ করে ?
চরিত্র টি নষ্ট তোমার,বুঝেছি এই বারে ।
কি হবে গো,এই বয়সে স্বামী খারাপ হলো,
সবার কাছে মান সন্মান বুঝি এবার গেলো।
কাল সকালেই চলে যাব,দেখো তোমায় ছাড়ি,
যা খুশী হয় ক'রো তুমি,রইলো ফাঁকা বাড়ি।"

মুহুর্ত কাল ভেবে নিয়ে, ঠিক ক'রে নিই মনে,
কিছুতেই আজ দেব না কো ভঙ্গ আমি রণে।
চকাস করে চুমু খেয়ে,মধুর সুরে বলি,
"ও রে আমার প্রাণ-সোহাগী,দুষ্টু আনারকলি।
মুখ তুলতুল,মন চুলবুল,চক্ষু পটল চেরা,
তোর পিরিতে হাবুডুবু,মন যে পাগল পারা।
প্রাণ-ভোমরা তুই রে আমার,পদ্মবনের মধু,
তুই যে রাধা,কৃষ্ণ আমি,মিছেই রাগিস শুধু।"

প্রশংসার চেয়ে মধুর,জগতে কি আছে ?
প্রশংসা তে পাথর গলে,কাঠের পুতুল নাচে।
ভালবাসার শক্তি এমন,পশু ও পোষ মানে,
নারী চির প্রেমের কাঙাল,সকলে তা জানে।
প্রশংসা আর ভালবাসার যুগল ঘূর্ণীপাকে,
বিবশ হয়ে গিন্নী আমায় ফ্যালফ্যালিয়ে দেখে।
বিস্ময়েতে হঠাৎ দেখি,ফিকফিকিয়ে হেসে-
গিন্নী বলে,'আয় রে সোনা,বসছি রে তোর পাশে'।

তার পরেতে শুনতে কি চাও,কি আমাদের হ'লো ?
মাঝ বয়সী দুইটি মানুষ বন্ধু হয়ে গেলো।
'তুই-তোকারি' ক'রে এখন আমরা বলি কথা,
দিনে দিনে বাড়ছে কেবল প্রেমের গভীরতা।
'গৃহিণী নয় বান্ধবী সে'- এই ধারণা নিয়ে,
পেয়েছে যে নির্ভরতা বেশী আগের চেয়ে।
উপচে পড়া ভালবাসায় আমি এখন তরুণ,
বিলম্বিত বসন্ততে ও মনে খুশীর ফাগুন।


*******************************
সমর কুমার সরকার / শিলিগুড়ি
********************************
Creative Commons License
বিলম্বিত বসন্ত by সমর কুমার সরকার / শিলিগুড়ি is licensed under a Creative Commons Attribution 3.0 Unported License.
Based on a work at samarkumarsarkar.blogspot.in

[<a rel="license" href="http://creativecommons.org/licenses/by/3.0/"><img alt="Creative Commons License" style="border-width:0" src="http://i.creativecommons.org/l/by/3.0/88x31.png" /></a><br /><span xmlns:dct="http://purl.org/dc/terms/" href="http://purl.org/dc/dcmitype/Text" property="dct:title" rel="dct:type">বিলম্বিত বসন্ত</span> by <a xmlns:cc="http://creativecommons.org/ns#" href="http://www.blogger.com/blogger.g?blogID=1050337976214013732#editor/target=post;postID=238377298593554976" property="cc:attributionName" rel="cc:attributionURL">সমর কুমার সরকার / শিলিগুড়ি</a> is licensed under a <a rel="license" href="http://creativecommons.org/licenses/by/3.0/">Creative Commons Attribution 3.0 Unported License</a>.<br />Based on a work at <a xmlns:dct="http://purl.org/dc/terms/" href="samarkumarsarkar.blogspot.in" rel="dct:source">samarkumarsarkar.blogspot.in</a>.]