'' বাংলা সাহিত্যের আসর ''

যে সমস্ত লেখক ও লেখিকা ' বাংলা সাহিত্যের আসরে ' তাদের নির্বাচিত লেখা প্রকাশ করতে চান,তারা তাদের লিখিত বিষয় টি Microsoft Words - এ লিখে অথবা Photo Shop -এ চিত্রসহ বিষয়টি প্রস্তুত করে samarkumarsarkar@yahoo.co.in বা samarkumarsarkar@gmail.com -এ E-mail করে পাঠিয়ে দেবেন । সদস্য হবার জন্য ও মন্তব্য লেখার জন্য Google Friend Connect ব্যবহার করুন। ব্লগ টিকে আপনাদের Face Book-এ Share করুন।

Tuesday, July 31, 2012

যে সংসারে পুরুষ ভেড়া,নারী কৃপণ - সমর কুমার সরকার / শিলিগুড়ি




যে সংসারে পুরুষ ভেড়া,নারী কৃপণ

গ্রামের মেয়ে লতার বিয়ে হলো শহরেতে,
শ্বশুর বাড়ি এসে লতা পড়লো বিপদে তে।
গ্রামে তে তার বাবার আছে প্রচুর জমি-জমা,
সারা বছর ক্ষেতের ফসল,ধান চালে রমরমা।
গ্রাম্য স্বভাব,'সকাল,দুপুর,রাত্রি'-এ তিন বেলা,
ভাত খেতো সে মর্জি মাফিক,ভর্তি থালা থালা।
শ্বশুর বাড়ি সকালে সব চা বিস্কুট খায়,
এর পরে তে আবার খাওয়া দুপুর বারো-টায়।
'নতুন বৌ',মুখ ফুটে আর বলে কেমন ক'রে?
সকাল থেকে বেলা দুপুর ক্ষিদে-র জ্বালায় মরে।
সুযোগ পেলে ফাঁকতালে তে চিনি গুলে খায়,
ভাতের ক্ষুধা  কখন ও কি চিনির জলে যায়?

শাশুড়ী তার 'স্বভাব কৃপণ',তার পরে মুখরা,
দিন রাত্রি পাকঘরে তার সতর্ক পাহারা।
দুপুরেতে মাপ ক'রে দেয় চার কৌটা চাল,
চার জনে তে খাবে,সাথে পাতলা মসুর ডাল।
ছোট একটি মাছের চাকা,ট্যালট্যালে তার ঝোল,
এর বেশী কেউ চাইলে পরে বেজায় গণ্ডগোল।
সপ্তাহেতে দু'দিন আবার আধা হাঁসের ডিম,
কিংবা হবে সিদ্ধ ভাতে আলু,বেগুন,সিম।
সমান মাপে ভাত,ডাল,মাছ,একবারে দেয় বেড়ে,
চাওয়ার উপায় থাকে না আর,পেট যদি না ভরে।
নতুন বউ-এর পেট ভরে না,আধাপেটাই রয়,
শাশুড়ী কে বলতে যে তার সাহস নাহি হয়।


বিকাল বেলার জলখাবারে এক কাপ চা,মুড়ি,
রাত্রি বেলায় চারটে রুটি,সামান্য তরকারি।
মজার ব্যাপার,এই বাড়িতে আর যাহারা আছে,
এই খাবারেই চলে তাদের,সহ্য হ'য়ে গেছে।
উপায় কিছু না পেয়ে আর লাজের মাথা খেয়ে,
লতা বলে আড়ালেতে,স্বামীর দিকে চেয়ে-
"অল্প খাবার খেয়ে আমি মরছি তিলে তিলে,
সে দিকেতে দাও না নজর,থাকো নিজের তালে।
ক্ষিদের জ্বালা বড় জ্বালা,সইবো কেমন ক'রে ?
এমন ভাবে কাটালে দিন,দেখছি যাবই মরে।"
তরুণ যুবক স্বামী বলে,"উপায় কিছুই নাই,
মায়ের উপর কথা বলার সাহস কোথায় পাই?

অনেক ভেবে লতা শেষে ফন্দি এঁটে মনে,
চালের কৌটা কূয়ায় ফেলে দিল সঙ্গোপনে।
একই রকম বড় মাপের কৌটা যোগাড় ক'রে,
চালের টিনে সাজিয়ে রেখে দিল চুপিসারে।
নিয়ম.মত শাশুড়ী তার চাল নিল যেই মেপে,
ব্যাপার কি তা বুঝতে পেরে,গেল ভীষণ ক্ষেপে।
বললো রেগে,"তুমি কত চালাক গাঁয়ের মেয়ে?
বুদ্ধি ক'রে বেশী খাবে,আমাকে ঠকিয়ে?
চালের কৌটা বদলে কি লাভ? মাপ তো আমার মনে,
সেথায় বদল না হলে আর বাড়বে না জীবনে।"
হাতের মাপে শাশুড়ী ফের চাল দিল ঠিক ক'রে,
নিরাশ হয়ে বিরস লতা গুমরে কেঁদে মরে।

শাস্ত্রে বলে,"পিঠ ঠেকে যার,শেষে দেওয়ালেতে,
মরিয়া সে বের করে পথ,বাঁচার তাগিদেতে।"
লতা ভাবে আপন মনে,"দোষ করিনি কিছু,
জেনে শুনে সবাই মিলে লাগলো আমার পিছু।
পেটের ক্ষিদেয় আমিই শুধু হবো কেন কাতর,
আধামরা ক'রে সবার নাড়িয়ে দেব গতর।"
এক দিন সে শাশুড়ী কে বললো মধুর স্বরে,
"দিনে দিনে খরচ যে মা যাচ্ছে কেবল বেড়ে।
সংসার ভার একবার মা ছাড়ুন আমার উপর,
বাঁচিয়ে দেবো অনেক টাকা,দুই-এক মাসের ভিতর।"
'বাঁচবে টাকা'-এই আশাতেই শাশুড়ী সব ভুলে,
লতার হাতে রান্না ঘরের চাবি দিলেন তুলে।

যে সংসারে পুরুষ ভেড়া,নারী সবার মাথা,
সেথায় হবে নিত্য বিপদ,এ তো জানা কথা।
সকাল বেলায় চায়ের সাথে বিস্কুট না পেয়ে,
স্বামী,শ্বশুর,কয় না কথা,দেখে কেবল চেয়ে।
দুপুর বেলায় রান্না এখন দুই কৌটা চাল,
হলুদ রঙের তরল দেখে বুঝতে হবে ডাল।
মাছের আবার ঝোল হবে কি? ভাজা হ'লেই চলে,
লতা বলে,''নুন,লঙ্কা নাও না ভাতে ডলে।"
বিকাল বেলা চায়ের সাথে বাদ গিয়েছে মুড়ি,
রাত্রে গোনা দু'টো রুটি,সামান্য তরকারি।
কৃপণ লোকের এমন স্বভাব,খরচ টা কম হ'লে,
ক্ষিদের জ্বালায় কষ্ট পেলেও,মুখে নাহি বলে।

ক'দিন পরে লতা দেখে,লাঠি দিয়ে ভর,
শ্বশুর মশাই খুঁড়িয়ে হাঁটে,পা কাঁপে থর্ থর্।
বাইরে খেয়ে আসে স্বামী,ভাবেই বোঝা যায়,
শাশুড়ী তো খাট থেকে আর নামতে নাহি চায়।
মাসের শেষে শাশুড়ী কে টাকা দিয়ে হাতে-
লতা বলে,"খরচ আরও হবে মা কমাতে।"
জড়িয়ে ধরে শাশুড়ী কয়,"বউমা, শোন কথা,
আধাপেটা খেয়ে সবার ঘুরছে কেবল মাথা।
সত্যি তুমি বুদ্ধিমতী,দিলে যে আক্কেল,
কূপণতা নয় কো ভাল,থাকিতে অঢেল।
এবার থেকে এই বাড়ি তে কৌটা মাপা বাদ,
খেয়ে-পরে সুখে বাঁচো,ক'রছি আশীর্বাদ।"

**************************************
সমর কুমার সরকার / শিলিগুড়ি

**************************************
Creative Commons License
যে সংসারে পুরুষ ভেড়া,নারী কৃপণ by সমর কুমার সরকার / শিলিগুড়ি is licensed under a Creative Commons Attribution 3.0 Unported License.
Based on a work at samarkumarsarkar.blogspot.in

[<a rel="license" href="http://creativecommons.org/licenses/by/3.0/deed.en_US"><img alt="Creative Commons License" style="border-width:0" src="http://i.creativecommons.org/l/by/3.0/88x31.png" /></a><br /><span xmlns:dct="http://purl.org/dc/terms/" property="dct:title">যে সংসারে পুরুষ ভেড়া,নারী কৃপণ</span> by <a xmlns:cc="http://creativecommons.org/ns#" href="http://www.blogger.com/blogger.g?blogID=1050337976214013732#editor/target=post;postID=4511502690571969254" property="cc:attributionName" rel="cc:attributionURL">সমর কুমার সরকার / শিলিগুড়ি</a> is licensed under a <a rel="license" href="http://creativecommons.org/licenses/by/3.0/deed.en_US">Creative Commons Attribution 3.0 Unported License</a>.<br />Based on a work at <a xmlns:dct="http://purl.org/dc/terms/" href="samarkumarsarkar.blogspot.in" rel="dct:source">samarkumarsarkar.blogspot.in</a>.]

Saturday, July 28, 2012

এসো না মোর বাড়ি - সমর কুমার সরকার / শিলিগুড়ি



এসো না মোর বাড়ি

বন্ধু,স্বজন আমার যারা,বলছি তাদের শোনো,
আমার বাড়ি রাতের বেলায় কেউ এসো না যেন!
ভাবছ মনে- বন্ধু,স্বজন আমার অপছন্দ?
মোটেই তা নয়,মানুষ আমি ততটা নয় মন্দ।
রাতের বেলায় এলে,আমায় দেখতে নাহি পাবে,
গল্প-গুজব ক'রতে এসে,মিছেই ফিরে যাবে।
তার মানে নয়,রাতের বেলায় থাকি না কো বাড়ি,
রাতের বেলায় ঘরে বসেই সকল কার্য সারি।
ভাবছ,কথার প্যাঁচে আমি দিচ্ছি কোন ধোঁকা?
ধোঁকা দিলেই ধোঁকা খাবে? তোমরা তো নও বোকা!
অর্ধসত্য কমই বলি,কথা টা নয় মিছে,
মিথ্যা কিছু বললে জেনো,সত্য তাতেও আছে।

আমি যখন জন্মেছিলাম,ছিল না কো আলো,
অমানিশার অন্ধকারে,জগৎ কালোয় কালো।
সেই আঁধারে জন্মে আমার হ'লো হাঁড়ির হাল,
গায়ের রঙ টি হ'লো কালো,তাই এত নাকাল !
কালো শুনেই তোমরা চোখে দেখতে থাকো কাক,
হয় তো বা কেউ শোনো কানে,কাকের 'কা-কা' ডাক।
কার ও চোখে ভেসে ওঠে,কালো গরু,ছাগল,
কালো যখন,ভাবনা-তে আর থাকবে কেন আগল?
কেউ বা ভাবো কালো ভালুক,কালো হনুমান,
কালো কোকিল,কালো ভ্রমর,যা হয় অনুমান।
ভক্ত জনে সঙ্গোপনে ভাবো কৃষ্ণ,কালী,
এ সব ভাবা সবই বৃথা,আগেই ব'লে ফেলি।

আমি কালো,সেই কালো নই,কালোর আঁধার মায়া,
অন্ধকারে দেখলে পরে,মনে হবে ছায়া।
এমন ও হয়,অন্ধকারে কেউ এসে মোর ঘরে,
আমায় দেখে মনের ভ্রমে পড়ে আতান্তরে।
কায়া তো নেই ছায়া আছে,কেমন ক'রে হয়?
কায়া-হীনের ছায়া কেন? মনেতে পায় ভয়।
আমি-ই স্বয়ং বসে আছি,তাই বোঝানোর ছলে,
সাদা রঙের দুই পাটি দাত দেখাই মুখটি খুলে।
কালো ছায়ার দন্ত দেখে,ভাবে অশরীরী,
প্রাণের ভয়ে পালায় ছুটে,'পড়ি কি ভাই মরি'!
তাই তো সবায় আগের থেকেই দিলাম হুঁশিয়ারি,
রাতের বেলায় কেউ যেন না আসে আমার বাড়ি।

কালো রঙের মানুষ যারা,তাদের ইতিহাস-
শুনলে পরে মনে হবে,'বিধির পরিহাস'।
শিশুর হবে ফুটফুটে নাম,কিন্তু কালো ব'লে,
ছেলে হ'লে ডাকবে তোমায়,'কালু','কালা','কেলে',
কিংবা ধরো 'কালো মাণিক',কিংবা 'কালাচাঁদ',
কালো রঙের কালির ছিটা পড়বে না কো বাদ।
মেয়ে হলে 'আন্নাকালী','কালিন্দী' বা 'কালী',
'ময়না','অলি','কৃষ্ণা','শ্যামা',নয় তো 'কৃষ্ণকলি'।
কালো ছেলে হ'লেও মায়ের গর্বে ভরে বুক,
একই সাথে কালো ব'লে কিছু টা পায় দুঃখ।
কালো মেয়ের দু'কূল ভাঙা,নেই কো কোন পাড়,
মায়ের সাথে পরিবারের সবারই মুখ ভার।

যৌবনেতে কালো ছেলে সঙ্কোচেতে মরে,
কালো ব'লে ফর্সা মেয়ের পড়ে না নজরে।
কালো মেয়ে চেয়ে থাকে সতৃষ্ণ নয়নে,
প্রেম কি তাহার ব্যর্থ হবে চরম অপমানে?
সমাজেতে 'সোনার ছেলে' কালো হ'লেও চলে,
'খাঁটি হীরা' কালো মেয়ের ভাগ্য নাহি খোলে।
'পাত্র-পাত্রী' দেখা শোনা,সেথাও সাদা-কালো,
কেউ ভাবে না গায়ের রঙে কি বা এলো-গেলো।
পাত্রী বাছার যোগ্যতা মান মোট একশো হ'লে,
ফর্সা মেয়ের ষাট নম্বর এমনিতে যায় মিলে।
কালো মেয়ের ষাট নম্বর এমনিতে যায় বাদ,
তখন তাকে পাততে যে হয় প্রলোভনের ফাঁদ।

সমাজ থেকে মুখ ঘুরিয়ে বিশ্বে নজর দিলে-
কালোর প্রতি অত্যাচারের বহু নজির মেলে।
কালো বলেই বন্দি ক'রে,বানিয়ে ক্রীতদাস,
সাদা রঙের সভ্য মানুষ ক'রতো জমি চাষ।
কালো বলেই হয়েছে সব চা বাগানের কুলি,
দ্বীপ হ'তে দ্বীপ,দ্বীপান্তরে,মানুষ চালাচালি।
হিন্দু বলো,বৌদ্ধ বলো,খ্রীষ্ট,মুসলমান,
সব ধর্মেই সাদা-কালোয় একই ব্যবধান।
বন্ধু,সবাই ভাবতে শেখো,'মানুষ শুধুই মানুষ',
সাদা-কালো সবার মনে একই রঙীন ফানুস।
ভাগ্যবলে ফর্সা ব'লে,হ'লে অহঙ্কারী,
ঘৃণা ক'রি বন্ধু তোমায়,এসো না মোর বাড়ি।

************************************
সমর কুমার সরকার / শিলিগুড়ি
*************************************
Creative Commons License
এসো না মোর বাড়ি by সমর কুমার সরকার / শিলিগুড়ি is licensed under a Creative Commons Attribution 3.0 Unported License.
Based on a work at samarkumarsarkar.blogspot.in

[<a rel="license" href="http://creativecommons.org/licenses/by/3.0/deed.en_US"><img alt="Creative Commons License" style="border-width:0" src="http://i.creativecommons.org/l/by/3.0/88x31.png" /></a><br /><span xmlns:dct="http://purl.org/dc/terms/" href="http://purl.org/dc/dcmitype/Text" property="dct:title" rel="dct:type">এসো না মোর বাড়ি </span> by <a xmlns:cc="http://creativecommons.org/ns#" href="http://www.blogger.com/blogger.g?blogID=1050337976214013732#editor/target=post;postID=6937361458120793693" property="cc:attributionName" rel="cc:attributionURL">সমর কুমার সরকার / শিলিগুড়ি</a> is licensed under a <a rel="license" href="http://creativecommons.org/licenses/by/3.0/deed.en_US">Creative Commons Attribution 3.0 Unported License</a>.<br />Based on a work at <a xmlns:dct="http://purl.org/dc/terms/" href="samarkumarsarkar.blogspot.in" rel="dct:source">samarkumarsarkar.blogspot.in</a>]

Wednesday, July 25, 2012

মারলে মাকড় হয় রে ধোকড় - সমর কুমার সরকার / শিলিগুড়ি


                 মারলে মাকড় হয় রে ধোকড়                     

'শ্যামাপ্রসাদ আচার্য',তার বসত 'বিরাটি'-তে,
যজমানি-তে সংসার ব্যয় চালান কোন মতে
ওই গ্রামের- বিরাট ধনী,'মধুসূদন ধর',
প্রকাণ্ড তার খামার-বাড়ি,বিরাট দালান ঘর
শ্যামা- ছেলে 'বামাচরণ' বয়েসেতে কিশোর,
মধু- ছেলে 'পদ্মলোচন',তারই প্রাণের দোসর
দুই কিশোরে গলাগলি,অবাধ মেলামেশা,
একের প্রতি অপর জনের গভীর ভালবাসা

পদ্মলোচন,বামাচরণ,দুই বন্ধু মিলে,
খেলছে লুডো এক বিকেলে,পড়ার- টেবিলে
শ্যামার বাড়ির স্যাঁৎসেঁতে ঘর,বড়ই করুণ হাল,
যেথায় সেথায় ঝুল-কালি,আর মাকড়সা-দের জাল
দৈবক্রমে মাকড়সা এক টেবিলেতে 'ড়ে,
দ্রুত বেগে চলতে থাকে,টেবিলের এক ধারে
মাকড়সা-তে কামড়ে দিলে,বন্ধু পাবে ব্যথা,
থেঁতলে দিল বামাচরণ মাকড়সাটির মাথা

অজ পাড়াগাঁ- সরল কিশোর,অতি সরল মতি,
ভয় পেয়ে যায় উত্তেজনায়,'লো যে দুর্গতি
মাকড়সা কে হত্যা  'রে,'লো কি না পাপ ?
দুই বন্ধুর মুখে ফোটে দুশ্চিন্তার ছাপ
যুক্তি 'রে বামা বলে- "পদ্মলোচন ভাই,
পাপ যদি মোর হয়ে থাকে,মোচন করা চাই
ঠাণ্ডা মাথায়,পূজার ঘরে,বাবার কাছে গিয়ে,
 তুই জেনে নে,কি বলেছে ,শাস্ত্রে বিষয়ে।"

শ্যামাপ্রসাদ গায়ত্রী জপ করেন সন্ধ্যা কালে,
ভীত মুখে পদ্মলোচন সেথায় গিয়ে বলে,-
"প্রণাম জানাই,ঠাকুর মশাই,জিজ্ঞাসা মোর মনে,
মাকড়সা-কে হত্যা যদি 'রি অকারণে,
তবে হবে কি ধরণের,কতটুকু পাপ?
কেমন করে পেতে পারি,পাপের থেকে মাফ?
শাস্ত্র ঘেঁটে উপায় যদি করেন নির্ধারণ,
সাধ্য মত চেষ্টা 'রে,করবো তা পালন

শ্যামাপ্রসাদ গরীব ব্রাহ্মণ,অতি ধুরন্ধর,
ভাবেন মনে," তো দেখি,বিরাট সু-খবর
গ্রাম্য ধনীর মূর্খ ছেলে,বুদ্ধি টা নয় পাকা,
কায়দা 'রে ভয় দেখালে,মিলতে পারে টাকা
মূর্খ মানুষ ধনী 'লে,ধর্মভীরু হয়,
ভয় দেখিয়ে ঘাড় ভাঙ্গা টা কঠিন কিছুই নয়
'শাস্ত্র মতে পাপ হয়েছে'-এমন বিধান দিলে,
ফাঁকতালেতে  মোটা টাকা,যাবে বোধ হয় মিলে।"

শ্যামাপ্রসাদ পুঁথি খুলে,বিধান দেবার ছলে,

মন গড়া এক শ্লোক আওড়ে,বলেন দুলে দুলে-
"মাকড়ং মহা জীবং,নারায়ণং সম,
অষ্টপদং,বাস জালং,দংশন নির্মম।
বুঝলে কি না,মারলে মাকড়,পড়লে তুমি জালে,
যমরাজেতে স্বয়ং দেবে নরকেতে ঠেলে।
প্রায়শ্চিত্ত করতে হবে,সঙ্গে পূজা,পাঠ,
তবেই তুমি মুক্ত হবে,হবে না ঝঞ্ঝাট।

ফর্দ টি এই দিচ্ছি লিখে,ধৈর্য ধরে শোনো,

লিখব যে সব,কোন মতেই কম হয় না যেন।
সোনার আংটি লাগবে দু'টি,রূপোর সিংহাসন,
গামছা,ধুতি গোটা ছয়েক,খাঁটি কাঁসার বাসন।
আতপ চাল,কাঁচাকলা,সবজি ও ফল ফুল,
একশো টাকা দক্ষিণা,তার কম নয় এক চুল।
এই যে দিলাম ফর্দ তোমায়,তারিখ টা ঠিক করো,
দেরী হ'লে,বিপদেতে পড়তে তুমি পারো।"

পদ্মলোচন মলিন মুখে বলে,"ঠাকুর মশাই,

সর্বনাশের চরম হ'লো,দেখছি এখন তাই।
সোনা,রূপা,কাপড়,বাসন,চাল,কলা সব ধ'রে,
লাগবে কয়েক হাজার টাকা,পাবেন কেমন ক'রে ?
বাড়ি বাড়ি পূজা ক'রে,কষ্টে চালান দিন,
এখন দেখি ক'রতে হবে,প্রচুর টাকা ঋণ।
এমন পাঁকে পড়ে মানুষ,ভাগ্য বিরূপ হ'লে,
আজ বিকেলে মারলো মাকড়,আপনার-ই ছেলে।"

রেগে গিয়ে শ্যামা প্রসাদ বলেন-"ডেঁপো ছেলে,

শাস্ত্র পড়া,ফর্দ কর,সবই গেল জলে।
মাকড়সা-টা কে মেরেছে,বলতে হ'তো আগে,
মিছিমিছি ফর্দ ক'রে সময় গেল ভোগে।
অন্য জাতে মারলে মাকড়,পাপের ভাগী হয়,
ব্রাহ্মণেতে শাস্ত্র রচে,তাদের কিসের ভয়?
শাস্ত্র লেখে ব্রাহ্মণেতে  নিজেরই কল্যাণে,
'মারলে মাকড় হয় রে ধোকড়'-মারিলে ব্রাহ্মণে।"

**************************************
সমর কুমার সরকার / শিলিগুড়ি

**************************************
Creative Commons License
মারলে মাকড় হয় রে ধোকড় by সমর কুমার সরকার / শিলিগুড়িis licensed under a Creative 
Commons Attribution 3.0 Unported License.Based on a work at samarkumarsarkar.blogspot.in

[<a rel="license" href="http://creativecommons.org/licenses/by/3.0/deed.en_US"><img alt="Creative Commons License" style="border-width:0" src="http://i.creativecommons.org/l/by/3.0/88x31.png" /></a><br /><span xmlns:dct="http://purl.org/dc/terms/" property="dct:title">মারলে মাকড় হয় রে ধোকড়</span> by <a xmlns:cc="http://creativecommons.org/ns#" href="http://www.blogger.com/blogger.g?blogID=1050337976214013732#editor/target=post;postID=8079895637145344791" property="cc:attributionName" rel="cc:attributionURL">সমর কুমার সরকার / শিলিগুড়ি</a> is licensed under a <a rel="license" href="http://creativecommons.org/licenses/by/3.0/deed.en_US">Creative Commons Attribution 3.0 Unported License</a>.<br />Based on a work at <a xmlns:dct="http://purl.org/dc/terms/" href="samarkumarsarkar.blogspot.in" rel="dct:source">samarkumarsarkar.blogspot.in</a>.]

Sunday, July 22, 2012

জাল - সমর কুমার সরকার / শিলিগুড়ি




জাল

জলচর মীন সুখে জলে করে ক্রীড়া,
কখন কি চায় ওরা,জালে পড়ি ধরা ?
কাহার নিয়তি কোথা,কেহ নাহি জানে,
সতত বুনিছে জাল ধীবরে যতনে।
খেপ-জাল,টানা-জাল,বেড়া-জাল রূপে,
মীনের আকৃতি মাপি,বোনে নানা মাপে।
যত পোক্ত মীন,তাহে তত শক্ত জাল,
জালজীবী নাশে মীন যেন সিদ্ধ কাল।

আকাশে উড়িয়া ফিরে যতেক খেচর,
মুক্ত কণ্ঠে গাহে গান বৃক্ষের উপর।
ওদের নিয়তি নহে মুক্ত রূপে বাঁচা,
পাখীধরা গড়ে ফাঁদ,ফাঁস-জাল,খাঁচা।
বন্দি করে বিহগেরে পিঞ্জর মাঝারে,
শিকলে বাঁধিয়া রাখে দাঁড়ের উপরে।
যে খগে মেলিত ডানা মুক্ত নীলাকাশে,
পিঞ্জরেতে করে বাস,শুধু ভাগ্যদোষে।

বন্য মৃগ,শশ,বরা,বনে করে বাস,
সেথা ও অদৃষ্ট দেখ করে পরিহাস।
কিরাতে ঘিরিয়া জালে,শরবিদ্ধ করে,
মাস লোভে অকালেতে প্রাণ সংহারে।
স্থল,জল,অন্তরিক্ষ,জালে জালে ঘেরা,
কে কাহারে জালে ফেলে,তাহারি মহড়া।
নানা রূপে,নানা ভিতে,নানা প্রলোভন,
জালে পড়ে যাবে ধরা হইলে স্খলন।

মানব বসতি ধরা পরিপূর্ণ জালে,
অলখে বিস্তৃত জাল,রহে অন্তরালে।
মায়াজাল,মোহজাল,রূপজাল ক্ষেপে,
নিয়তি টানিছে রশি,বিধিলিপি মেপে।
মায়াজালে বদ্ধ নর করে সংসার,
পুত্র,কন্যা,ভার্যা সহ পালে পরিবার।
খণ্ড-ভূমে বাসা বাঁধে,করে রোজগার,
সারাটি জীবন কাটে,বহি দায় ভার।

মোহজালে বদ্ধ নর পশুর সমান,
ধন,মান,কাম মোহে সদা যুযুধান।
কে কাহারে নীচে টানি,আপনি উঠিবে,
দিবা-নিশি প্রাণপাত উপায় উদ্ভবে।
রূপজালে বাঁধি নরে সুন্দরী রমণী,
নাশে পুরুষত্ব বোধ,সঞ্চালি তর্জনী।
মহান তাপস,কি বা সর্বজয়ী বীর,
রমণী নয়ন-বাণে সতত অধীর।

মীনপতি পড়ে জালে,বাঁচে ক্ষুদ্র পোনা,
জাল মুক্ত হ'তে,চাই কঠোর সাধনা।
যত শক্ত জাল হোক,ছিদ্র পথে ভরা,
ক্ষুদ্র রূপে বাঁচো যদি পড়িবে না ধরা।
সযতনে প্রলোভন এড়িয়ে যে চলে,
জালের সাধ্য কি আছে,ফাঁদে তারে ফেলে ?
কামিনী,কাঞ্চন হ'তে মুক্ত রাখো মন,
বিস্তৃত জালের ফাঁস হইবে মোচন।

************************************
সমর কুমার সরকার / শিলিগুড়ি
************************************
Creative Commons License
জাল by সমর কুমার সরকার / শিলিগুড়ি is licensed under a Creative Commons Attribution 3.0 Unported License.
Based on a work at samarkumarsarkar.blogspot.in.

[<a rel="license" href="http://creativecommons.org/licenses/by/3.0/deed.en_US"><img alt="Creative Commons License" style="border-width:0" src="http://i.creativecommons.org/l/by/3.0/88x31.png" /></a><br /><span xmlns:dct="http://purl.org/dc/terms/" href="http://purl.org/dc/dcmitype/Text" property="dct:title" rel="dct:type">জাল </span> by <a xmlns:cc="http://creativecommons.org/ns#" href="http://www.blogger.com/blogger.g?blogID=1050337976214013732#editor/target=post;postID=2720147695047932557" property="cc:attributionName" rel="cc:attributionURL">সমর কুমার সরকার / শিলিগুড়ি</a> is licensed under a <a rel="license" href="http://creativecommons.org/licenses/by/3.0/deed.en_US">Creative Commons Attribution 3.0 Unported License</a>.<br />Based on a work at <a xmlns:dct="http://purl.org/dc/terms/" href="samarkumarsarkar.blogspot.in" rel="dct:source">samarkumarsarkar.blogspot.in</a>.]

Thursday, July 19, 2012

অপ্রেমে সৃষ্টি প্রেমের বৃষ্টি - সমর কুমার সরকার / শিলিগুড়ি


অপ্রেমে সৃষ্টি প্রেমের বৃষ্টি
                                                                            
'নিবারণ গুণ' রাগেতে আগুন,অসহায়,দিশাহারা,
শুনে লোকমুখে-'প্রেমিকা তাহার হয়েছে এলাকা ছাড়া।
দীর্ঘ দিনের প্রেম প্রেম খেলা,আজ সব-ই হলো শেষ,
ও পাড়ার রাজু প্রেমিকা কে নিয়ে হয়েছে  নিরুদ্দেশ'
ভাবে নিবারণ,"জীবন আমার,হয়ে গেল ছারখার,
সমাজেতে মুখ দেখাব কি ভাবে ? বাঁচিতে চাহি না আর।
স্বপ্ন আমার হলো চুরমার,বুকেতে বিরহ জ্বালা,
রাত বারো-টায় শেষ ট্রেন যায়,লাইনে দিব যে গলা।"

অনামী স্কুলেতে পড়ায় মোনামি,প্রাথমিক শিক্ষিকা,
বড় পরিবারে সেই রোজগেরে,সংসার টানে একা।
প্রেমিক আগেই দিয়েছে তাগাদা,বিবাহ করিতে চায়,
অসহায় এই পরিবার ফেলে,কেমনে মোনামি যায়।
মন কষাকষি,শেষে রেষারেষি,বন্ধ ছিল যে কথা,
আজ যে খবর জেনেছে মোনামি,বুকেতে বাজিছে ব্যথা।
ভণ্ড প্রেমিক অন্য নারীর গলায় দিয়েছে মালা,
শোকেতে পাগল মোনামি ভাবিল,'লাইনে পাতিবে গলা'

সাঁঝের আঁধারে নিবারণ গেল,যেথা দূরে রেল-গেট,
সঙ্গেতে নিলো শেষবারে কিনে,দেশলাই,সিগারেট।
'এ জীবনে কিছু পাওয়া তো হলো না,জন্ম গেল যে বৃথা,
ঘন্টা কয়েক সময় পরেই লাইনে লুটাবে মাথা।'-
কাঁদে নিবারণ আঁধারে লুকায়ে,"ভগবান,তুমি নাই,
বড় দুঃখ পেয়ে,মরিবার আগে,ক্ষমা তারে ক'রে যাই।
কাটে না সময়,মনে সংশয়,মশার কামড়ে মরি,
সিগারেট টেনে প্রেমিকার মুখ ভুলিতে চেষ্টা ক'রি।"

ও দিকে মোনামি 'কাজ আছে' 'লে ঘর থেকে হয় বার,
যে ভাবেই হোক,পৌঁছিতে হবে রেলপথ বরাবর।
সহসা আকাশ কালো মেঘে ছায়,মেঘ ডাকে গুরু গুরু,
মোনামি চলেছে আপন লক্ষ্যে,বুক কাঁপে দুরু দুরু।
ধেয়ে আসে ঝড়,উড়ে ধূলা-বালি,নাই তা তে দৃকপাত,
এখন ও যে তাকে যেতে হবে প্রায় আড়াই মাইল পথ।
রাত বারো-টার শেষ ট্রেনে আজ,জীবনের ও হবে শেষ,
বৃষ্টির জলে ভিজে ভিজে চলে,আলুথালু কেশ,বেশ।

বৃষ্টিতে ভিজে ভাবে নিবারণ-"এ তো দেখি ভারি সাজা !
মরিতে এখন ও দেরী আছে,তবে বৃষ্টিতে কেন ভেজা ?
ঠাণ্ডাতে দেহে ধরেছে কাঁপুনি,এ তো নয় ভাল কথা,
এত যদি কাঁপি,কেমন করিয়া লাইনে পাতিব মাথা ?
বৃষ্টির জলে ডুবে গেছে মাঠ,রেল লাইনেও জল
'মৃত্যু পথের যাত্রী'-র চাই কঠিন মনের বল।
জলে ডোবা ওই লাইনেতে শুয়ে,গলাটা পাতা যে ভার,
নাকে-কানে যদি ঢুকে যায় জল ? মরা তো হবে না আর।"

লাইনের ধারে এসেছে মোনামি,জলে ভিজে একাকার,
সিক্ত বসনে সিক্ত শরীর,প্রকাশে সুষমা তার।
কাঁপিছে ওষ্ঠ,দেহ-বল্লরী,আঁধারে,গাছের নীচে,
শুধু প্রতীক্ষা,বারো-টার ট্রেন কখন আসিবে কাছে।
দূরে দেখা যায় আলোক বিন্দু,আসিছে মৃত্যু ধেয়ে,
মোনামি চলিলো বৃষ্টিতে ভেজা পিছল পথ টি বেয়ে।
কেঁদে কেঁদে বলে-"বাবা,মা তোমরা,ক্ষমা ক'রো অভাগীরে,
বিদায় পৃথিবী,বিদায় জীবন,আবার আসিব ফিরে।"

জোরালো আলোয় দেখে নিবারণ,পাগলিনী এক নারী,
প্রাণ দিবে ব'লে আসিছে ছুটিয়া,লক্ষ্য রেলের গাড়ি।
ক্ষিপ্রগতিতে ছুটে নিবারণ,বুকে তারে নেয় টেনে,
মহা কোলাহলে চলে যায় গাড়ি,ওরা বাঁধা আলিঙ্গনে।
বাদলের ধারা ঝরে ঝর ঝর,দুইটি হৃদয় কাঁপে,
ওষ্ঠে ওষ্ঠে তাপ বিনিময়,দেহ ভরে উত্তাপে।
দুই হৃদয়ের কামনা-বাসনা,কানায় কানায় ভরে,
বাহুডোরে বাঁধা মানব-মানবী,একে চাহে অপরে-রে। 

দুইটি জীবন বাঁচায়ে বৃষ্টি,জীবন করিল দান,
দুইটি হৃদয়ে ফুটিল কুসুম,পাখীতে গাহিল গান।
দুইটি প্রাণেতে জ্বালিলো প্রদীপ,দূর হলো সব ক্লেশ,
অপ্রেমে বৃষ্টি শুরু হয়ে ছিল,প্রেমে তে হইল শেষ। 
বৃষ্টি শান্তি,তৃষ্ণার সুধা,বৃষ্টি পরমানন্দ,
বৃষ্টি মাতায়ে রাখে কবিকুলে,যোগায় প্রাণেতে ছন্দ।
'আষাঢ় মাসের প্রথম দিবসে'-আজ ও তার আগমন,
প্রেমে তে বৃষ্টি,অপ্রেমে বৃষ্টি,সবেতেই শিহরণ।

***********************************
সমর কুমার সরকার / শিলিগুড়ি

***********************************
Creative Commons License
অপ্রেমে সৃষ্টি প্রেমের বৃষ্টি by সমর কুমার সরকার / শিলিগুড়ি is licensed under a Creative Commons Attribution 3.0 Unported License.
Based on a work at samarkumarsarkar.blogspot.in

[<a rel="license" href="http://creativecommons.org/licenses/by/3.0/"><img alt="Creative Commons License" style="border-width:0" src="http://i.creativecommons.org/l/by/3.0/88x31.png" /></a><br /><span xmlns:dct="http://purl.org/dc/terms/" href="http://purl.org/dc/dcmitype/Text" property="dct:title" rel="dct:type">অপ্রেমে সৃষ্টি প্রেমের বৃষ্টি </span> by <a xmlns:cc="http://creativecommons.org/ns#" href="http://www.blogger.com/blogger.g?blogID=1050337976214013732#editor/target=post;postID=5156908031635650136" property="cc:attributionName" rel="cc:attributionURL">সমর কুমার সরকার / শিলিগুড়ি</a> is licensed under a <a rel="license" href="http://creativecommons.org/licenses/by/3.0/">Creative Commons Attribution 3.0 Unported License</a>.<br />Based on a work at <a xmlns:dct="http://purl.org/dc/terms/" href="samarkumarsarkar.blogspot.in" rel="dct:source">samarkumarsarkar.blogspot.in</a>.]