'' বাংলা সাহিত্যের আসর ''

যে সমস্ত লেখক ও লেখিকা ' বাংলা সাহিত্যের আসরে ' তাদের নির্বাচিত লেখা প্রকাশ করতে চান,তারা তাদের লিখিত বিষয় টি Microsoft Words - এ লিখে অথবা Photo Shop -এ চিত্রসহ বিষয়টি প্রস্তুত করে samarkumarsarkar@yahoo.co.in বা samarkumarsarkar@gmail.com -এ E-mail করে পাঠিয়ে দেবেন । সদস্য হবার জন্য ও মন্তব্য লেখার জন্য Google Friend Connect ব্যবহার করুন। ব্লগ টিকে আপনাদের Face Book-এ Share করুন।

Tuesday, July 31, 2012

যে সংসারে পুরুষ ভেড়া,নারী কৃপণ - সমর কুমার সরকার / শিলিগুড়ি




যে সংসারে পুরুষ ভেড়া,নারী কৃপণ

গ্রামের মেয়ে লতার বিয়ে হলো শহরেতে,
শ্বশুর বাড়ি এসে লতা পড়লো বিপদে তে।
গ্রামে তে তার বাবার আছে প্রচুর জমি-জমা,
সারা বছর ক্ষেতের ফসল,ধান চালে রমরমা।
গ্রাম্য স্বভাব,'সকাল,দুপুর,রাত্রি'-এ তিন বেলা,
ভাত খেতো সে মর্জি মাফিক,ভর্তি থালা থালা।
শ্বশুর বাড়ি সকালে সব চা বিস্কুট খায়,
এর পরে তে আবার খাওয়া দুপুর বারো-টায়।
'নতুন বৌ',মুখ ফুটে আর বলে কেমন ক'রে?
সকাল থেকে বেলা দুপুর ক্ষিদে-র জ্বালায় মরে।
সুযোগ পেলে ফাঁকতালে তে চিনি গুলে খায়,
ভাতের ক্ষুধা  কখন ও কি চিনির জলে যায়?

শাশুড়ী তার 'স্বভাব কৃপণ',তার পরে মুখরা,
দিন রাত্রি পাকঘরে তার সতর্ক পাহারা।
দুপুরেতে মাপ ক'রে দেয় চার কৌটা চাল,
চার জনে তে খাবে,সাথে পাতলা মসুর ডাল।
ছোট একটি মাছের চাকা,ট্যালট্যালে তার ঝোল,
এর বেশী কেউ চাইলে পরে বেজায় গণ্ডগোল।
সপ্তাহেতে দু'দিন আবার আধা হাঁসের ডিম,
কিংবা হবে সিদ্ধ ভাতে আলু,বেগুন,সিম।
সমান মাপে ভাত,ডাল,মাছ,একবারে দেয় বেড়ে,
চাওয়ার উপায় থাকে না আর,পেট যদি না ভরে।
নতুন বউ-এর পেট ভরে না,আধাপেটাই রয়,
শাশুড়ী কে বলতে যে তার সাহস নাহি হয়।


বিকাল বেলার জলখাবারে এক কাপ চা,মুড়ি,
রাত্রি বেলায় চারটে রুটি,সামান্য তরকারি।
মজার ব্যাপার,এই বাড়িতে আর যাহারা আছে,
এই খাবারেই চলে তাদের,সহ্য হ'য়ে গেছে।
উপায় কিছু না পেয়ে আর লাজের মাথা খেয়ে,
লতা বলে আড়ালেতে,স্বামীর দিকে চেয়ে-
"অল্প খাবার খেয়ে আমি মরছি তিলে তিলে,
সে দিকেতে দাও না নজর,থাকো নিজের তালে।
ক্ষিদের জ্বালা বড় জ্বালা,সইবো কেমন ক'রে ?
এমন ভাবে কাটালে দিন,দেখছি যাবই মরে।"
তরুণ যুবক স্বামী বলে,"উপায় কিছুই নাই,
মায়ের উপর কথা বলার সাহস কোথায় পাই?

অনেক ভেবে লতা শেষে ফন্দি এঁটে মনে,
চালের কৌটা কূয়ায় ফেলে দিল সঙ্গোপনে।
একই রকম বড় মাপের কৌটা যোগাড় ক'রে,
চালের টিনে সাজিয়ে রেখে দিল চুপিসারে।
নিয়ম.মত শাশুড়ী তার চাল নিল যেই মেপে,
ব্যাপার কি তা বুঝতে পেরে,গেল ভীষণ ক্ষেপে।
বললো রেগে,"তুমি কত চালাক গাঁয়ের মেয়ে?
বুদ্ধি ক'রে বেশী খাবে,আমাকে ঠকিয়ে?
চালের কৌটা বদলে কি লাভ? মাপ তো আমার মনে,
সেথায় বদল না হলে আর বাড়বে না জীবনে।"
হাতের মাপে শাশুড়ী ফের চাল দিল ঠিক ক'রে,
নিরাশ হয়ে বিরস লতা গুমরে কেঁদে মরে।

শাস্ত্রে বলে,"পিঠ ঠেকে যার,শেষে দেওয়ালেতে,
মরিয়া সে বের করে পথ,বাঁচার তাগিদেতে।"
লতা ভাবে আপন মনে,"দোষ করিনি কিছু,
জেনে শুনে সবাই মিলে লাগলো আমার পিছু।
পেটের ক্ষিদেয় আমিই শুধু হবো কেন কাতর,
আধামরা ক'রে সবার নাড়িয়ে দেব গতর।"
এক দিন সে শাশুড়ী কে বললো মধুর স্বরে,
"দিনে দিনে খরচ যে মা যাচ্ছে কেবল বেড়ে।
সংসার ভার একবার মা ছাড়ুন আমার উপর,
বাঁচিয়ে দেবো অনেক টাকা,দুই-এক মাসের ভিতর।"
'বাঁচবে টাকা'-এই আশাতেই শাশুড়ী সব ভুলে,
লতার হাতে রান্না ঘরের চাবি দিলেন তুলে।

যে সংসারে পুরুষ ভেড়া,নারী সবার মাথা,
সেথায় হবে নিত্য বিপদ,এ তো জানা কথা।
সকাল বেলায় চায়ের সাথে বিস্কুট না পেয়ে,
স্বামী,শ্বশুর,কয় না কথা,দেখে কেবল চেয়ে।
দুপুর বেলায় রান্না এখন দুই কৌটা চাল,
হলুদ রঙের তরল দেখে বুঝতে হবে ডাল।
মাছের আবার ঝোল হবে কি? ভাজা হ'লেই চলে,
লতা বলে,''নুন,লঙ্কা নাও না ভাতে ডলে।"
বিকাল বেলা চায়ের সাথে বাদ গিয়েছে মুড়ি,
রাত্রে গোনা দু'টো রুটি,সামান্য তরকারি।
কৃপণ লোকের এমন স্বভাব,খরচ টা কম হ'লে,
ক্ষিদের জ্বালায় কষ্ট পেলেও,মুখে নাহি বলে।

ক'দিন পরে লতা দেখে,লাঠি দিয়ে ভর,
শ্বশুর মশাই খুঁড়িয়ে হাঁটে,পা কাঁপে থর্ থর্।
বাইরে খেয়ে আসে স্বামী,ভাবেই বোঝা যায়,
শাশুড়ী তো খাট থেকে আর নামতে নাহি চায়।
মাসের শেষে শাশুড়ী কে টাকা দিয়ে হাতে-
লতা বলে,"খরচ আরও হবে মা কমাতে।"
জড়িয়ে ধরে শাশুড়ী কয়,"বউমা, শোন কথা,
আধাপেটা খেয়ে সবার ঘুরছে কেবল মাথা।
সত্যি তুমি বুদ্ধিমতী,দিলে যে আক্কেল,
কূপণতা নয় কো ভাল,থাকিতে অঢেল।
এবার থেকে এই বাড়ি তে কৌটা মাপা বাদ,
খেয়ে-পরে সুখে বাঁচো,ক'রছি আশীর্বাদ।"

**************************************
সমর কুমার সরকার / শিলিগুড়ি

**************************************
Creative Commons License
যে সংসারে পুরুষ ভেড়া,নারী কৃপণ by সমর কুমার সরকার / শিলিগুড়ি is licensed under a Creative Commons Attribution 3.0 Unported License.
Based on a work at samarkumarsarkar.blogspot.in

[<a rel="license" href="http://creativecommons.org/licenses/by/3.0/deed.en_US"><img alt="Creative Commons License" style="border-width:0" src="http://i.creativecommons.org/l/by/3.0/88x31.png" /></a><br /><span xmlns:dct="http://purl.org/dc/terms/" property="dct:title">যে সংসারে পুরুষ ভেড়া,নারী কৃপণ</span> by <a xmlns:cc="http://creativecommons.org/ns#" href="http://www.blogger.com/blogger.g?blogID=1050337976214013732#editor/target=post;postID=4511502690571969254" property="cc:attributionName" rel="cc:attributionURL">সমর কুমার সরকার / শিলিগুড়ি</a> is licensed under a <a rel="license" href="http://creativecommons.org/licenses/by/3.0/deed.en_US">Creative Commons Attribution 3.0 Unported License</a>.<br />Based on a work at <a xmlns:dct="http://purl.org/dc/terms/" href="samarkumarsarkar.blogspot.in" rel="dct:source">samarkumarsarkar.blogspot.in</a>.]

No comments:

Post a Comment